রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। অথচ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা এই সবজি বিক্রি করছে মাত্র চার থেকে পাঁচ টাকায়। শুধু এই ফুলকপি নয়, কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত একাধিক হাত বদলে প্রায় সব সবজির দাম এভাবে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এতে বিক্রি করতে গিয়ে কৃষক এবং কিনতে গিয়ে ভোক্তা ঠকছে। মাঝখান থেকে পকেট ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন কৃষকরা যে দামে ফুলকপি বিক্রি করছে, এতে তাদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতা মিলছে না। অনেক চাষি ক্রেতা না পেয়ে বা বাজারে দাম না থাকায় ক্ষেতেই ফুলকপি নষ্ট করছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং মেহেরপুর ও রাজবাড়ী জেলার ফুলকপি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার শীতকালীন ফুলকপিসহ সবজির উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে দাম খুব কম। কারণ গ্রামের বাজারে কৃষকরা সরাসরি পাইকারদের কাছে পণ্য বিক্রি করে। একই পণ্য ঢাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আসে। তবে এই সবজি আসতে অনেক হাতবদল হয়। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মিলন খান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু ফুলকপি ২০ টাকা পিসও বিক্রি হয়েছে।’
এদিকে সুপারশপ ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ মেহেরপুর, রাজবাড়ী ও নওগাঁর বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ফুলকপি সরাসরি কিনে আনছে।এসব ফুলকপি তাদের নিজস্ব আউটলেটগুলোতে ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে খুচরা বাজারের চেয়ে অনেকটাই কমে ক্রেতারা কিনতে পারছে।
এ বিষয়ে স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা জেনেছি মেহেরপুর, রাজবাড়ী ও নওগাঁ এলাকার কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে ফুলকপি বিক্রি করতে পারছে না। এটা জানার পর স্বপ্ন টিম যোগাযোগ করে এবং তাদের বাজার থেকে যথাসম্ভব বর্ধিত মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করি আমরা। তাই সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করা এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবহারের জন্য আট টাকা পিসে ক্রেতাদের কাছে ফুলকপি বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।’
মেহেরপুর : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রাম। নানা ধরনের সবজির জন্য প্রসিদ্ধ গ্রামটি। গতকাল সকালে গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতের পর ক্ষেত ফুলকপি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক চাষি কৃষিযন্ত্র দিয়ে কেটে ক্ষেত পরিষ্কার করছে। স্থানীয়দের অনেকে গরুর খাবারের জন্য ফুলকপি নিয়ে যাচ্ছে। দু্-একজন চাষি ট্রাকে করে ফুলকপি ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠাচ্ছে। শুধু সাহারবাটি নয়, একই চিত্র মেহেরপুরের প্রায় সব গ্রামের।
সাহারবাটি গ্রামের ফুলকুপি চাষি কাসেদ মালিথা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদ করেছি। কপি কাটতে যে শ্রমিক খরচ লাগে, সেটাও লস। সে কারণে অল্প অল্প করে নিজে কাটছি। এ পর্যন্ত মাত্র ২৭ বস্তা ফুলকপি চট্টগ্রামে পাঠাইছি। বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। ৯ থেকে ১০ টাকা করে দাম পেলে গাড়িভাড়া উঠবে, না হলে পকেট থেকে গাড়িভাড়া দিতে হবে।’
সাহারবাটি গ্রামের ফুলকপি চাষি ও ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন কালের কণ্ঠ বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করে লস খেয়েছি এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ফুলকপির ব্যবসা করে লস আরো তিন লাখ টাকা।’
মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের কৃষক রাকিব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে চার টাকায়। কয়েক দিন ধরে স্বপ্ন আমাদের কাছ থেকে ফুলকুপি প্রতি পিস ছয় টাকায় কিনছে।’
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে চাষিদের ফুলকপির চাষ করতে দেরি হয়েছে। ফলে সারা দেশে একই সঙ্গে ফুলকপি উৎপাদন হয়েছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় মেহেরপুরের ফুলকপি চাষিরা এ বছর ক্ষতিগ্রস্ত।
রাজবাড়ী : গতকাল জেলা শহরের শ্রীপুর বাজারে ফুলকপি নিয়ে আসা কৃষক আসলাম মুন্সি জানান, এবার আগাম ফুলকপির চাষ করে তাঁরা শুরুর দিকে কিছুটা দাম পেলেও শেষ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পারেননি।
কৃষক বাশার শেখ জানান, অনেক কপি সরাসরি বাজারে এনে খুচরায় ক্রেতাদের কাছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করছেন। এতেও ক্ষতি পোষানো যাচ্ছে না।