Image description

বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে তেমন সুবিধা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

বিআরটি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশেষায়িত এই লেনে শুধু বিআরটিসির বাস চলা নিশ্চিত করতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে চিঠি দিলেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। যাত্রীদের দ্রুততম সময়ে চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। তবে নির্মাণ-জটিলতায় টঙ্গী থেকে গাজীপুর অংশে এই প্রকল্প সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে। এখনো অসমাপ্ত এই প্রকল্পের কাজ সপ্তম দফায় পিছিয়ে গেছে। তবে কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও গত ১৬ ডিসেম্বর বাস-সেবা চালু হয়েছে। বিআরটি করিডরে বিশেষায়িত বাস-সেবা চালুর কথা থাকলেও ঢাকা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড তা এখনো জোগাড় করতে পারেনি। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গাজীপুরের শিববাড়ী থেকে রাজধানীর গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনে বিআরটিসির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ১০টি বাস দিয়েছে। বিআরটি কর্মকর্তারা বলছেন, বিআরটিসির এই বাস-সেবা পরীক্ষামূলক।

যানজট এড়িয়ে বিআরটি লেন দিয়ে দ্রুততম সময়ে গাজীপুর ও ঢাকায় যাতায়াতের আশায় নিত্য যাত্রীরা বিআরটিসির এসি বাস পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এখন সেই সন্তুষ্টির জায়গা নিয়েছে অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, বিআরটিসির বাস নির্ধারিত সময়ে কাউন্টার ছাড়ে না। যাত্রী পূর্ণ হলে তবেই বাস ছাড়া হয়। এতে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের সময় অনেক নষ্ট হয়।

বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, বিআরটি লেনে বেসরকারি কোম্পানির আন্তজেলা বাস চলাচলের অনুমতি না থাকলেও ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কড়া নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে এমন বাসও চলছে। এরই মধ্যে গাজীপুর পরিবহন নামের একটি কোম্পানির বাস বিশেষায়িত এই লেনে চলাচল শুরু করেছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তরে খবর নিয়ে জানা যায়, চ্যালেঞ্জার, মাশাআল্লাহ, অভিজাত পরিবহনসহ ৫-৬টি পরিবহন কোম্পানির বাসও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিআরটি করিডর হয়ে গাজীপুরে যেতে চাইছে।

বাস মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী জুবায়ের বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পে বেসরকারি কোম্পানির বাস চলাচল করবে কি করবে না, এমন কোনো নির্দেশনা নেই। আমরা রুট পারমিট পাব না, এমন কিছুও বলা নেই। তাই আমাদের অনেকে এখন বাস নামাতে আবেদন করছেন।’

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ পর পর ছাড়ায় বিআরটিসির বাসের সেবা নিয়ে মানুষ এমনিতেই বিরক্ত। বেসরকারি বাস চললে বিআরটিসির বাস যাত্রী হারাবে। এতে লোকসান এড়াতে বিআরটিসির এই বিশেষ সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মাঝখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকায় সড়ক থেকে যেখানে-সেখানে অটোরিকশা বিআরটি লেনে ঢুকে পড়ছে। মোটরসাইকেল চালকেরা উল্টো পথে ঢুকে পড়ছেন। এতে পুরো বিআরটি লেনে হযবরল অবস্থা।

বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘নগর পরিবহনের বাসগুলোর বিআরটি করিডর ব্যবহারের অনুমতি নেই। বিআরটি প্রকল্পে যেন শুধু বিআরটিসির বাসই চলতে পারে, সে জন্য সহযোগিতা চেয়ে গত ৩০ নভেম্বর ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বিআরটি থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ট্রাফিক বিভাগ থেকে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমরা নিজেরাই স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি; কিন্তু ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেটও নেই। তাই আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা বিআরটিএ এবং জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা ভাবছি।’

জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার (ট্রান্সপোর্ট) মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি ডিএমপিতে এসেছে কি না, আমার জানা নেই। তাই বিআরটি প্রকল্পে বাস চলাচলের বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।’

প্রকল্প পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী টার্মিনাল পর্যন্ত বিআরটির ২৫টি স্টেশন থাকবে। এই স্টেশনগুলোর অবকাঠামো নির্মিত হলেও কারিগরি কার্যক্রম কোনোটিতে চালু হয়নি।

বিআরটি প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ)। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। গত ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও সপ্তম দফায় পিছিয়েছে অসমাপ্ত নির্মাণকাজ। প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বেসরকারি বাস চলাচলের অনুমতি নেই। ঢুকে পড়ছে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল। পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ।