Image description

শিল্পের পর এবার আবাসিকের মিটারবিহীন গ্রাহকদেরও গ্যাসের দাম বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে যাচাইবাছাইয়ে বসেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের তুলনায় মিটারবিহীন গ্রাহক নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে কি না সেটি বের করা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গ্যাসের অপচয় কমানোই বিইআরসির মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কর্তৃপক্ষ আবাসিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে দিচ্ছে বলে জানা যায়।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবাসিকে মিটারবিহীন গ্রাহকদের গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ২০২৩ সালের। এর ওপর বিইআরসি একসময় কমিটি করেছিল। তার ওপর রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে এ নিয়ে বিইআরসির উদ্যোগেই বিআইডিএস একটি গবেষণা করেছিল। এর ওপর কোনো সিদ্ধান্ত তখন নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কমিশন সেই রিপোর্ট ও গবেষণা নিয়ে বসেছে। আমরা বিতরণ কোম্পানিগুলোর এমডি ও প্রতিনিধিসহ পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়ার যায় তা ঠিক করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিইআরসি কর্তৃপক্ষ জানান, ২০২২ সালে প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে গ্যাসের পরিমাণ হিসাব করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো মনে করে যে, সে সময় বিইআরসি কর্তৃপক্ষ এর মূল্য কম ধরে। কিন্তু বিইআরসির রিপোর্টের সঙ্গে এর সত্যতা মেলে না। এ জন্য বিষয়টি আরও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। মিটারবিহীন গ্রাহকরা আসলে কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে তা বের করতে হবে। এই গ্রাহকদের গ্যাসের অপচয় কমাতে সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি মিটারবিহীন গ্রাহক বেশি গ্যাস ব্যবহার করে তাহলে দাম বৃদ্ধির সুযোগ আছে কি না তা চিন্তাভাবনা করা হবে। এ মুহূর্তে দুই চুলায় গ্রাহক ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। আর একচুলায় ৫৫ ঘনমিটার। তিতাস কর্তৃপক্ষ মনে করেন এই পরিমাণ আরও বেশি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দিয়ে মিটার ও মিটারবিহীন গ্রাহকদের হিসাবের এই গরমিল বের করার চিন্তা করছে বিইআরসি।

তবে এক্ষেত্রে গ্যাসের পরিমাণে তারতম্য হলেও গ্রাহকের টাকার অঙ্কে হেরফের হবে না। আইনগতভাবে পেট্রোবাংলার দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়ার সুযোগ না থাকায় লাইসেন্সধারী কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে। এ কারণে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের পর বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব চেয়েছে বিইআরসি। ৭ জানুয়ারি ইস্যু করা পত্রে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে ট্যারিফ পরিবর্তনের প্রস্তাব কমিশনে দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

গত ১২ জানুয়ারি তিন কর্মদিবস শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিতরণ কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিতে পারেনি। দেশে বর্তমানে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি হচ্ছে- তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি (টিজিটিডিসি), বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড (বিজিডিসিএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল), পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল), কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে বাল্কে প্রস্তাব জমা দিতে পারব, আশা করছি। মিটারবিহীন গ্রাহক যারা, তাদের ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়েও বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে মিটারবিহীন গ্রাহকরা। আমরা গ্যাসের পরিমাণ ও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করব। তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকরা অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। এক চুলা ৫৫ ঘনমিটারের বিল ও দুই চুলা ৬০ ঘনমিটারের বিল আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ ঘনমিটার পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের রেকর্ড পাওয়া গেছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী ও মিটারবিহীন গ্রাহকের ব্যবহারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক অনেকটা মিতব্যয়ী হন। বিইআরসি সর্বশেষ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশ দেয় ২০২২ সালের জুনে। আবাসিকের এক চুলায় ৯৯০ টাকা আর দুই চুলায় ১ হাজার ৮০ টাকা বিল ধরা হয়। আর মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারে ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।