
জুলাই সনদের সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নেয়ারও পরামর্শ তাদের। তবে বিএনপি বলছে, সংসদ নির্বাচনের পরে হতে পারে গণভোট। যদিও আগেই চায় জামায়াত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দুই দফা বৈঠকের পর ঐকমত্য হওয়া সংবিধান সম্পর্কিত বিষয় বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তৃতীয় ধাপের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাব থেকে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ এই চারটি সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
সেখান থেকে সবশেষ 'সাংবিধানিক আদেশ' এর চূড়ান্ত সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা। যা বৈধতা পাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদে মূল সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একটি আদেশ' জারি করতে পারে। উক্ত সাংবিধানিক আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
বুধবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হয় এসব বিষয় নিয়েই। বৈঠকে নেতারা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ অনুচ্ছেদ এবং ২৫ অনুচ্ছেদ পরস্পরবিরোধী। তবে ঘোষণাপত্রকে সূত্র ধরার প্রয়োজন নাই বলে মনে করেন অনেকে।
জাতীয় ঐকমত্যের স্বার্থে কমিশনের প্রস্তাব মেনে নেয় এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বেশ কিছু ইসলামী ও বামপন্থি রাজনৈতিক দল। তাদের দাবি, জুলাই সনদের বাস্তবায়নে গণভোটই হলো চূড়ান্ত অথরিটি। পাশাপাশি গণভোটের জন্য সরকারের একটা আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
বিএনপির বক্তব্য, অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে গঠিত হয়েছে, সেভাবে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী উচ্চ আদালতের পরামর্শে জুলাই সনদ ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে দলটি মনে করে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের ক্ষমতা সংসদের নেই। পরবর্তী সংসদ গঠিত হওয়ার পর গণভোটের কথা বলছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখনি কার্যকর করার মতো কোনো দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে কি না। আমরা জুডিশিয়ারির কাছে যাই। সংসদ বেসিক স্ট্রাকচার পাল্টাতে পারবে, যদি সে বেসিক স্ট্রাকচার পাল্টায় সেটার লেজিটিমিসি নেয়ার জন্য আর্টিকেল ১৪২ অনুসারে গণভোটে যেতে হবে।’
তবে ঘোষণা না দিলেও দেশে বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়েছে বলে মনে করে জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া প্রস্তাব মেনে নিলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি জানান দলটির নেতারা।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমাদের এফিলিট ডিভিশন সংবিধানের ব্যাখ্যা চায়। কিন্তু তারা প্রণেতা নয়। এমএনএম কিন্তু আইন প্রণয়ন। এটা আইন তৈরির একটা অংশ এটা আমাদের বুঝতে হবে। এখানে কনফিউশন তৈরির কোনো জায়গা নেই। তার চেয়ে আজকে ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে সে জায়গায় যদি আমরা একমত হয়ে যাই, তাহলে দেশ আগামীতে সুন্দর একটা নির্বাচন পাবে। আমরা জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন বলেছি এজন্য গণভোট আগে হতে হবে।’
এদিকে বরাবরের মতোই গণপরিষদের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এই নতুন প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে দলটি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশ এটা যদি আমরা দিই তাহলে বর্তমান সংবিধানের স্ট্যাটাস কি হবে এটাসহ অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। এজন্য আমরা বলেছি এটা নিয়ে আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করবো। লিগ্যাল এক্সপার্টদের অপিনিয়ন নেব যে এ সাংবিধানিক আদেশ কিভাবে কার্যকর হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা মুলতবি করেন কমিশনের সহসভাপতি ড আলী রিয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে ফিরে আসলে ফের আলোচনা শুরু হবে।