Image description

১০ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) অনার বোর্ড থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দিয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর গত ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এই আলোচিত ছাত্রনেতা, তবুও কালো কালি মোছা হয়নি অনার বোর্ড থেকে। এরই মধ্যে চাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হওয়ার পর আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শাখা ছাত্রলীগের নেতা এম এ খালেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী চাকসু ভবনের তৃতীয় তলায় থাকা সাবেক জিএসদের তালিকা থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম কালো কালি দিয়ে মুছে দেন। একই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মান্নাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চাকসুর সংগ্রহশালায় টানানো মান্নার ছবিও খুলে ফেলেন তারা। একই দিন দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতিদের (ভিপি) তালিকা থেকেও মান্নার নাম মুছে দেয় ছাত্রলীগ। ওই রাতে রাজধানীর বনানীর একটি বাসা থেকে আটক করা হয় মাহমুদুর রহমান মান্নাকে।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মান্নার নাম মুছে ফেলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা সাইফুল রোমেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু, নাজমুল হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়ে এম এ খালেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘তিনি (মান্না) যেহেতু ছাত্রের লাশ চেয়েছেন তাই ছাত্র প্রতিনিধি হওয়ার কোনো অধিকার তার নেই। তাই আমরা চাকসুর সাবেক জিএসদের নামের তালিকা থেকে মান্নার নাম মুছে দিয়েছি এবং তার ছবি খুলে ফেলেছি।’

এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনও আলোচিত এই ছাত্রনেতার নাম পুনর্লিখনের উদ্যোগ নেয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক ও চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

যোগাযোগ করা হলে চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহিদুর রহমান অনার বোর্ড সম্পর্কে জানেন না বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া তিনি এর দায়িত্বে নেই বলেও জানান। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও চাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন মান্না। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সারা দেশে আলোড়ন তোলা এই তরুণ তখন থেকেই ছাত্রদের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেন।

পরবর্তীতে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই এখানকার ছাত্রদের মধ্যেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার নেতৃত্বগুণ, সাহসী অবস্থান ও সাংগঠনিক দক্ষতার ফলে পরপর দুইবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে বিরল রেকর্ড গড়েন। ডাকসু নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে এবং ১৯৮০ সালে বাসদ ছাত্রলীগ থেকে তিনি ভিপি নির্বাচিত হয়েছিন। ডাকসুর ইতিহাসে একমাত্র দুইবার নির্বাচিত ভিপিও তিনি।