Image description

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা পালিয়ে ভারতে যান। তবে যে জুলাই আন্দোলনের কারণে হাসিনার পতন হয় সেই আন্দোলন নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে যাচ্ছেন অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। তার রাজনৈতিক অবস্থান ও মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা হলেও থেমে নেই তিনি।  গতকাল রোববার নেপালের জেন-জির আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাওন। সেখানেও তিনি বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবকে ইঙ্গিত করে কটাক্ষ করেন তিনি। 

 

নিজের ফেসবুক পোস্টে শাওন লেখেন, নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারকে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। কারণ, দেশটির প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি নেপালের গণআন্দোলনকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন! অথচ তিনি বলতে পারতেন, ‘লুটপাট-অগ্নিকাণ্ড-ভাঙচুর ছিল তরুণদের বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’। আন্দোলনকারীরা তো আসলে তারই নিয়োগকর্তা! তাহলে তিনি কি বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে কিছুই শেখেননি?

শাওনের এমন স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।এই অভিনেত্রীর সমালোচনা করে তারা শাওনকে আওয়ামী লীগের দোসর ও সুবিধাবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ তার গ্রেফতার দাবি করেন।   

শাওনকে উদ্দেশ করে লাবিব আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, নেপাল তো আর দেশের হাজার হাজার টাকা বিদেশে পাচার করে নাই। সেটা বলতে লজ্জা করে?

মো. আব্বাস বলেন, সুশীলগিরি কম করেন। আজকে তারা নেপালের অন্তবর্তী সরকারের পদত্যাগের জন্য মাঠে নেমেছে।

কারিম গাজী লিখেছেন, লীগ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাওনের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। 

মীর খালিদ বলেন, তুমি সময়ের উপযোগী সুবিধাবাদী, তোমাকে চিনি আমি। 

আফনান আবির নামে এক নেটিজেন লেখেন, নেপালে শাওনের মতো ‘সম্পত্তির লোভে’ বান্ধবীর বাবাকে বিয়ে করার মতো মেয়ে নাই।  এখানেই নেপাল ও বাংলাদেশের পার্থক্য।

নুরুজ্জামান নুর বলেন, স্রোতের বিপরীত শাওন, তসলিমা নাসরিন, মমতাজ-এরা সব সময় আওয়ামী লীগের মনের কথাই বলে। এরা হলো লীগের জন্য একেকটা মডেল। লীগের সবাই এদের মতো চরিত্রবান হতে চায়।

ইমদাদ হোসাইন বলেন, এদের মন মারাত্মক বিষাক্ত, সমাজে বিষ ছড়ানো ছাড়া কিছুই করতে পারে না। 

ফজলুল করিম মিনা ও বকুল আহমেদ বলেন, এই নারীকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না? সে এখনো কিভাবে গারদের বাইরে আছে। 

শাওনকে বাকশালি কীট বলে মন্তব্য করেনে নীলা আক্তার নামে একজন। 

  

ফরহাদ হোসেন নামে আরেকজন লেখেন, হুমায়ূন আহমেদের বিধবা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী খুবই জ্ঞানী। দুর্ভাগ্যবশত তার জ্ঞান খুবই আংশিক এবং অন্ধ। তার চশমা হাসিনার কোনো ভুল দেখতে পায় না।

প্রসঙ্গত, হাসিনার পতনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠে শাওনের বিরুদ্ধে।  ওই সময় এই অভিনেত্রী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘সময়রেখা’ নামে এক অ্যালবামে উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্ট দেন। এরপর সেগুলো থেকে অনেক পোস্ট ডিলিট করেন। 

এরপর গেল ফেব্রুয়ারিতে অভিনেত্রী শাওনকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।

এছাড়া ২২ এপ্রিল অভিনেত্রী শাওনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।  বাবা ও মাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। 

শাওনের দ্বিতীয় মা নিশি ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আদালতে হাজির হয়ে বাড্ডা থানার দুই পুলিশ সদস্য অভিযোগ স্বীকার করেন। তারা বলেন, বাড্ডা থানার তৎকালীন ওসির নির্দেশে তারা বাদী নিশি ইসলামকে আটক ও নির্যাতনে অংশ নেন। শাওন, ডিবি হারুনসহ বাকি আসামিরা হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী একটি ম্যারেজ মিডিয়ায় বিয়ের জন্য পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন। সে বিজ্ঞাপন থেকে নিশির সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ে। এ ঘটনা জানার পর বাবার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান শাওন। এ সময় শাওন ও তার অন্যান্য ভাই বোনেরা ক্ষমতার প্রভাবে দ্বিতীয় মা নিশিকে ছয় মাসের জেলে পাঠান।