Image description

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাকিবুল হাসান ভোট পেয়েছেন ১টি। সেই ভোট কে দিয়েছেন, তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। কারণ, রাকিবুল নিজের ভোটটি অন্য এক প্রার্থীকে দিয়েছেন।

ফলাফলের তালিকায় দেখা গেছে, রাকিবুলের একমাত্র ভোটটি এসেছে ছাত্রীদের রোকেয়া হল থেকে। সেই ভোটারকে খুঁজতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। পোস্টে উল্লেখ করেছেন, খুঁজে পেলে সেই নারী ভোটারকে বিয়ে করতে চান, যদিও তাঁর খোঁজ এখনো তিনি পাননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছে ছিল, একদিন ডাকসুতে নির্বাচন করবেন। সেই সুযোগ আসায় নির্বাচনে অংশগ্রহণই তাঁর কাছে বড় বিষয় হয়ে ওঠে। ভিপি পদে প্রার্থী হওয়ার কারণ, সবার কাছে পরিচিতি পাওয়া। আর নিজের ভোটটি যাতে বিফলে না যায়, সে জন্য পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন তিনি।

ডাকসুর ২৮ পদে কারা কোনটিতে জয়ী

 

শুধু রাকিবুল একা নন, ডাকসুর ভিপি (সহসভাপতি) পদে প্রার্থী হওয়া আরও দুজন পেয়েছেন ১টি করে ভোট। তাঁদের একজন রাকিবুলেরই বন্ধু ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী সুজন হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়ার ইচ্ছা ছিল। সবাই জানত, আমি মজার ছলেই দাঁড়িয়েছি। কারও কাছে ভোট চাইনি, নিজের ভোটও নিজেকে দিইনি।’

তাহলে ১টি ভোট কীভাবে পেলেন এমন প্রশ্নে সুজন বলেন, ‘আমিও তাঁকে খুঁজছি।’

রাকিবুল, সুজনসহ ভিপি পদে প্রার্থী হওয়া তিনজন পেয়েছেন ১টি করে ভোট। তৃতীয়জন হলেন রাসেল হক। তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র। তাঁর প্রাপ্ত ভোটও ১।

রাকিবুল হাসান। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে এক ভোট পেয়েছেন তিনি
রাকিবুল হাসান। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে এক ভোট পেয়েছেন তিনিছবি: সংগৃহীত

৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে ১০ ভোটের কম পেয়েছেন ২৩ জন। দুজন পেয়েছেন ১০ ভোট। এই ২৩ প্রার্থীর সম্মিলিত ভোট ১২৮।

অন্যদিকে ভিপি পদে জয়ী হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। আর ছাত্রদলের প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়েছেন।

ডাকসুর যেকোনো পদে নির্বাচন করার জন্য এবার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৩০০ টাকা জমা দিতে হয়েছে।

এক ভোটের মতো দুই ভোটও পেয়েছেন তিনজন

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনজন প্রার্থী ২ ভোট করে পেয়েছেন। তাঁদের একজন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুল্লাহ। তিনি পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে ভিপি পদে প্রার্থী হন।

হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় ঠিকভাবে প্রচার চালাতে পারেননি। তবে হেরে গেলেও আশাহত নন এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার যেই আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা যদি নির্বাচিতরা গ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করেন, তাহলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করব।’

ভিপি পদে ২ ভোট পাওয়া অন্য দুজন হলেন মো. সোহানুর রহমান ও মো. নাছিম উদ্দিন।

‘পরিবেশটাকে বোঝা’

ভিপি পদে সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রার্থী ছিলেন ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুদাব্বীর রহমান। তিনি পেয়েছেন ৩ ভোট। তবে এর মধ্যে তাঁর নিজের ভোটটি নেই, কারণ নিজেকে ভোট দেননি তিনি। এখন তিনি খুঁজছেন ওই তিন শিক্ষার্থীকে, যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়েছেন।

মুদাব্বীর রহমান। ভিপি পদে সবচেয়ে কনিষ্ঠ এই প্রার্থী পেয়েছেন ৩ ভোট
মুদাব্বীর রহমান। ভিপি পদে সবচেয়ে কনিষ্ঠ এই প্রার্থী পেয়েছেন ৩ ভোটছবি: সংগৃহীত

তাহলে ভিপি পদে কেন দাঁড়ালেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মুদাব্বীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি কি না, তা যাচাই করতেই আমি প্রার্থী হই। আমি দেখাতে চেয়েছি, গণতন্ত্র থাকলে সবাই অংশ নিতে পারে। এ ছাড়া আমার উদ্দেশ্য ছিল মাঠে থেকে সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়া। পরিবেশটাকে বোঝা।’

মুদাব্বীরের মতো ৩ ভোট করে পেয়েছেন আরও দুই প্রার্থী। তাঁরা হলেন শাহ জামাল সায়েম ও মো. হেলালুর রহমান।

প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হেলালুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে দাঁড়ানো যায় কি না—এমন কথা একদিন মুঠোফোনে বলেছিলেন তাঁর বাবা। এরপর তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। প্রার্থী হওয়ার পর প্রথমে ফেসবুকে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে প্রচার বন্ধ করে দেন।বন্ধুবান্ধব কিংবা সহপাঠীদের কাউকে ভোট দেওয়ার কথা বলেননি হেলালুর। তবু কীভাবে ৩ ভোট পেলেন, তা অবাক করেছে তাঁকে। এর কারণ, তিনি তাঁর ভোটটি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দিয়েছেন।

ভিপি পদে প্রার্থী হয়ে ৭ ভোট পেয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাদের ভরসা করে সরকারে পাঠিয়েছিলাম, তারা আগের রেজিমটা (শাসন) ফিরিয়ে আনছে। আমি ভেবেছি, অন্য কেউ যেহেতু পারছে না, তো আমি কেন চেষ্টা করব না?’

‘সাহস দেখানোটাই গুরুত্বপূর্ণ’

ডাকসু নির্বাচনে নারী ভিপি প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। তাঁদের মধ্যে সংস্কৃত বিভাগের জান্নাতী বুলবুল নিজের ভোটসহ পেয়েছেন মাত্র ৬ ভোট। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম অন্তত ৫০০ ভোট পাব। কিন্তু মাত্র ৬টি পেলাম।’

তবে ভিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সাহস দেখানোটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন জান্নাতী বুলবুল।