Image description

নির্দেশনা স্পষ্ট। সিলেটের ফুটপাথ ছাড়তেই হবে হকারদের। এই নির্দেশনা জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলমের। সঙ্গে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীরও। নগরকে জঞ্জালমুক্ত করতে দু’জনের মত এক। তবে, হকারদের উচ্ছেদ করা হবে না। তাদের পুনর্বাসন করা হবে। আর সেটি হবে পূর্বের জায়গায়। হকার্স মার্কেট মাঠেই। এই উদ্যোগ সিলেট সিটি করপোরেশন থেকেই নেয়া হয়েছিল দু’বছর আগে। তখন মেয়র ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে এই মাঠ প্রস্তুত করে নগরের সব হকারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হয়। ফুটপাথ খালি হওয়ার কারণে নগরে ফিরেছিল সৌন্দর্য।

কিন্তু ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান লন্ডনে পালিয়ে যাওয়ার কারণে নগর অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতিও অনেকটা পাল্টে যায়। আর ওই সময়ই হকার্স মার্কেট মাঠ ছেড়ে হকাররা ফের অবস্থান নেন সড়কে। এখন সিলেটের ফুটপাথ বলতে কিছুই নেই। সবই হকারদের দখলে। বলতে গেলে জঞ্জালে পরিণত হয়েছে সিলেট নগর। এতে করে বাড়ছে অপরাধও। এই অবস্থায় গত মাসের শেষ দিকে সিলেটে যোগদান করেই নগরকে সাজানোর ঘোষণা দেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। যোগদানের পর তিনি নগরের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সহ নানা পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সবার মতামত নেন। সমস্যা চিহ্নিত করেন। কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখেন। আসে পরামর্শও। হকার উচ্ছেদ করতে হবে। প্রথমেই নজর দেন নগরের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজের দিকে। কিন ব্রিজে গাড়ি চলে না। আর এই সুযোগে গোটা কিন ব্রিজ দখলে নিয়েছিল হকাররা। এতে করে মানুষের হাঁটা-চলাই দায় হয়ে পড়েছিল।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত ছিল সময়সীমা। কিন ব্রিজে হকার বসতে পারবে না। সকালে প্রশাসন থেকে চলে অভিযান। যারা বসেছিলেন তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দুপুরের দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে হকার্স মার্কেট পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক। সঙ্গে যান সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার। তারা প্রায় আধাঘণ্টা হকার্স মার্কেট পরিদর্শন করেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মাঠ সংস্কারে কিছু নির্দেশনা দেন সাবেক মেয়র ও ডিসি। মাঠ দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। ওখানেই ফিরবেন হকাররা। তাদের উচ্ছেদ নয়, করা হবে পুনর্বাসন। মাঠের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে। যাতে করে হকাররা ওখানে বসে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন। মাঠ পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটকে সাজাতে বিগত এক বছর প্রশাসনের কেউ কোনো উদ্যোগ নেননি। নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করেই বিষয়টি অনুধাবন করেন। একইসঙ্গে তিনি বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শেয়ার করেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা জেলা প্রশাসককে সহযোগিতা করতে নেমেছি। তিনি বলেন, একজন দু’জন করে বসতে বসতে সবাই ফুটপাথে বসে গেছে। এখন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় হকাররাও বুঝতে পারছেন ফুটপাথ ছাড়তে হবে। তবে তাদের যে ব্যবসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, তা নয়। তাদের জায়গা দিয়েই ফুটপাথ ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, এই জেলা ও শহর আমাদের সকলের। শহরে হকার একটা বড় সমস্যা। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবাই নগরের বড় সমস্যা হিসেবে হকার সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন। আমরা হকারদের উচ্ছেদ করার আগে পুনর্বাসনের জায়গা দেখার জন্য এসেছি। আমরা আশাবাদী, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সিলেটের ফুটপাথ হকারমুক্ত হবে। আর হকারদের ব্যবসায় সুযোগ দিয়ে তাদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তিনি জানান, আমরা বলে দিয়েছি হকাররা রাস্তায় বসবে না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মাঠ প্রস্তুত করা হবে। এই মাঠকে নান্দনিক করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনেরও লক্ষ্য নগর হকার ও যানজটমুক্ত থাকবে। এটা সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এবার সমন্বিত উদ্যোগ হয়েছে।

তিনি বলেন, হকার্স মার্কেট মাঠ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কিছু কাজ করতে হবে। কিছু কাজ করে দিলেই তারা বসতে পারবেন। পাশাপাশি বিনোদনের কিছু রাইড দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বরাদ্দের কিছুটা অপ্রতুলতা আছে। কিন্তু নগরের অন্যতম একটি সমস্যা সমাধানে যাতে বরাদ্দের সমস্যা না হয়, সেদিকটিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এদিকে, হকার্স মার্কেট মাঠ পরিদর্শনের পর সিলেটের সাবেক মেয়র ও বর্তমান ডিসি হেঁটেই নগরের কিন ব্রিজ পরিদর্শন করেন। তবে, তাদের পরিদর্শনকালে কিন ব্রিজে কোনো হকারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। পরে সাবেক মেয়র ও ডিসি কিন ব্রিজের দক্ষিণ সুরমা অংশের মুখে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চালান। এ সময় দেখা গেছে অনেকেই সড়কের পাশে অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা করছিলেন। সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে শ্রমিকরা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে দেয়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ থেকে যাতে নগরের ফুটপাথে অবৈধভাবে কেউ না বসেন সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা না মানলে নগরের গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট সহ আশপাশ এলাকার ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।