
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ চার দফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা অন্তত ৭টি রাজনৈতিক দল। আগামীকাল (সোমবার) পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এসব দল যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলগুলো। গত ২৮শে জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সেদিন ডান ঘরানার ১০টি রাজনৈতিক দল একমঞ্চে উঠে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে দাবি তুলে ধরে বলেছেন, পিআর পদ্ধতি না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। মূলত ওইদিন থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। যদিও ওইদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। তবে এই দাবির পক্ষের দলগুলো তাদের অবস্থানে বেশ অনড় আছে। জানা যায়, গত ১৩ই জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের ফলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী নেপথ্যে থেকে ইসলামী দলগুলোকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা করে অবশেষে ২৮শে জুন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে এক মঞ্চে ওঠেন তারা। ওই মঞ্চ থেকে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন কথা বলেন বক্তারা। তবে ওইদিনই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তাদের উদ্দেশ্য আছে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়।
পিআর নিয়ে এই দলগুলোর অবস্থানকে অনেকে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন বিলম্বিত করারও কৌশল হতে পারে এটি। যদিও দলগুলোর নেতারা বলছেন, যৌক্তিক এবং জনগণের দাবি হিসেবে পিআর-এর পক্ষে তারা।
এ ব্যাপারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ৫৩ বছর দেশে আসনভিত্তিক নির্বাচন হয়েছে, আমরা এবার দলভিত্তিক নির্বাচন চাই। এতে প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন হবে। তিনি বলেন, এত বছর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি চলে আসছে। বর্তমান সরকার সংস্কারের মাধ্যমে জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। সরকারের সেই ওয়াদা পূরণ করতে হলে পিআর মানতে হবে। অন্যথায় দেশতো অনিশ্চয়তার দিকে যাবেই। হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার নয়, শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব সুপারিশ অতি জরুরি, অন্তত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত, সেগুলোর সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু একটি নির্বাচন নয়; এটি একটি বিপ্লব-পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সুযোগ। ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্যদিয়েই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।