Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে ছাত্রশিবির করার কারণে ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে ছাত্রত্ব না নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে। 

আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর প্যানেলের এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনে আরিফ উল্লাহ ২ হাজার ৩৯২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছেন। স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ৪ হাজার ৩ হাজার ৩৩৪টি ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুর রশিদ জিতু।

আরিফ বলেন, ১৯৯৪ সালের ১৬ আগস্ট শহীদ কামরুল ইসলাম নামে এক ভাইকে এই ক্যাম্পাস থেকে হারিয়েছি। উনি জাবিতে ভর্তি সুযোগ পেয়েছিলেন, যখন ভাইভা দিতে এসেছিলেন তখন শিবির সন্দেহে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়া ক্যাম্পাসের আরেক ভাই ছাত্রশিবির করার কারণে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পুলিশ পায়ে গুলি করে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে।

আরিফ উল্লাহ আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ভাইবোনদের ধন্যবাদ জানায় আমরা। একই সঙ্গে স্মরণ করছি এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন, তাদের জীবনকে সহজ করে দেন।

তিনি বলেন, আজকে ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে ২০ জন নির্বাচিত হয়েছেন এবং আরও ৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তারা যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে পারে সে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল ছাত্রশিবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্রসংগঠন জাবিতে নিষিদ্ধ বলে জানতেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে জাবিতে ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসময় কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তখন একই দাবি করেছিল শাখা ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতেও।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট ছাত্রশিবিরের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছর ২৬ আগস্ট মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে জাবিতে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।

এর প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের সব ছাত্র সংগঠন ‘সর্বদলীয় ঐক্য’ গঠন করে শিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। তখন ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, জাবি সাংস্কৃতিক জোটসহ ক্যাম্পাসের সব সংগঠন মিলে শিবিরের বিরুদ্ধে সেই ‘সর্বদলীয় ঐক্য’ গড়ে তোলে।

এরপর ১৯৮৯ সালে জাবির ১৪২তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপিত দাবিসমূহে শিবির নিষিদ্ধের দাবি ছিল। ওই সিন্ডিকেটের সভার ৩ নম্বর দাবিতে তখন বলা হয়েছিল, ‘ছাত্রশিবির নামধারী সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট সংগঠনটির রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিত হইবে।’ তখন এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।’

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পর শাখা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ‘দীর্ঘদিন ধরে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ছাত্রশিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষিদ্ধের একটি বয়ান তৈরি করে এসেছে। আদতে এই বয়ানের কোনো সত্যতা নেই। ১৯৮৯ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১৪২তম সভায় শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবনা এলেও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।’

বরং সভার সিদ্ধান্ত ছিল ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়’ উল্লেখ করা হয়েছে একই বিবৃতিতে।