
Md Saidul Islam( মুহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম)
এসোসিয়েট প্রফেসর, নানইয়াং টেকনোলোজিকাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি জাতির আত্মা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কেবল জ্ঞান চর্চার জায়গা নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার কারখানা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ সুস্থ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হওয়া আবশ্যক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক প্রভাববলয়ে ঢুকে পড়েছে, যেখানে দলকানা শিক্ষকদের প্রভাব একাডেমিক নীতি-নৈতিকতা ও সততার জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রত্যেক শিক্ষক তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করতে পারেন—এটি তাঁর নাগরিক অধিকার। কিন্তু যখন সেই মতাদর্শ শিক্ষার জায়গায় এসে একাডেমিক ইন্টিগ্রিটিকে ক্ষুণ্ণ করে, তখন তা হয়ে ওঠে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। দলকানা শিক্ষকরা রাজনৈতিক আনুগত্যে অন্ধ হয়ে মিথ্যা, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের কারণে গবেষণা ও শিক্ষা নষ্ট হয়, শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্র।
একটি সত্য সর্বজনস্বীকৃত—বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন ছাড়া কোনো ফ্যাসিবাদ বিকশিত হতে পারে না। সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক দলকানা শিক্ষক সরাসরি ফ্যাসিবাদী শাসনকে মদদ দিয়েছেন, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস বৈধ করেছেন এবং একাডেমিক পরিবেশকে দমন-পীড়নের যন্ত্রে রূপান্তরিত করেছেন। তারা শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেননি, বরং জাতির সার্বিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
চব্বিশের বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন প্রয়োজন একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলকানা শিক্ষকদের প্রভাবমুক্ত করে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যাওয়া। এই প্রেক্ষাপটে কিছু জরুরি পদক্ষেপ হলো:
1. বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তি: সব ধরনের দলান্ধ ও দলকানা শিক্ষকদের প্রভাব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত করা।
2. ক্রিমিনালাইজেশন: একাডেমিক ইন্টিগ্রিটি ভঙ্গকারী দলকানা শিক্ষকদের অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইনের আওতায় আনা।
3. একাডেমিক কেপিআই ও এপ্রাইজাল: প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট একাডেমিক কী পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর (KPI) নির্ধারণ এবং বার্ষিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাঁদের একাডেমিক ট্র্যাকে রাখা।
4. সুস্থ একাডেমিক সংস্কৃতি: স্বচ্ছতা, সততা ও মুক্তচিন্তার উপর ভিত্তি করে শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা।
5. নিরাপদ ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীদের জন্য ভয়ের পরিবর্তে নিরাপদ ও অনুপ্রেরণাদায়ক ক্যাম্পাস তৈরি করা।
6. গবেষণা ও উদ্ভাবন: উন্নত গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বকে তাক লাগানো।
7. বিশ্ব র্যাংকিং: এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দলকানা শিক্ষকদের প্রভাবমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার উপর। কেবল রাজনৈতিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানের আলোকে আলোকিত কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারবে। একাডেমিক ইন্টিগ্রিটি, গবেষণার উৎকর্ষতা ও মুক্ত চিন্তার চর্চা—এই তিনটি ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ তার উচ্চশিক্ষাকে বৈশ্বিক মানে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।