Image description
 
 
আগামি দিনে ছাত্রদলের পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করবে ছাত্র ইউনিয়ন। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্রচার কৌশলে তার প্রমান পাওয়া গেছে। এমনকি মেঘমমল্লার বসুর ছাত্র ইউনিয়নের অংশটির সাথে ছাত্রদলের নির্বাচনী বোঝাপড়া হয়েছিলো। সংখ্যালঘু ছাত্রদের আবাস ও ছাত্রলীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত জগন্নাথ হলের ভোটের চিত্রে তা স্পষ্ট। সেখানে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম পেয়েছেন সর্বেবাচ্চ ১২৭৬ ভোট। ছাত্র ইউনিয়নের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ১১৭০ ভোট। মজার ব্যাপার হলো ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী হামিম পেয়েছেন মাত্র ৩৯৮ ভোট। অপরদিকে ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী মায়েদ পেয়েছেন ১১০৭ ভোট। অর্থাৎ ছাত্রদলের ভিপি ও এজিএস প্রার্থীর চেয়ে অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়েছেন জিএস প্রার্থী হামিম। এই হলে ছাত্রশিবিরের সাদেক কায়েম পেয়েছেন মাত্র ১০ ভোট ও ফরহাদ ৫ ভোট। অর্থাৎ ছাত্রলীগের ঘাটিতে বলা যায় শিবির কোনো ভোট পায়নি।
 
ছাত্র ইউনিয়নের সাথে ছাত্রদলের বা বিএনপির একটি অংশের যে গোপন সমঝোতা হয়েছে বলে মনে করা হয় তাতে তারা হামিমের পরিবর্তে মেঘমল্লার বসুকে জিএস হিসাবে সমর্থন দেয়। জিএস হিসাবে হামিম পেয়েছেন ৫২৫৭ ভোট। অপরদিকে মেঘমল্লার বসু ৪৯৪৯ ভোট। প্রায় কাছাকাছি। অথচ মেঘের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইমি পেয়েছেন মাত্র ৬৮ ভোট। মেঘমল্লার বসুর এই ভোট এসেছে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের ভোটারদের কাছ থেকে।
 
ছাত্রদল যদি হামিমকে পুরোপুরি সমর্থন দিতো তাহলে শিবিরের এস এম ফরহাদের সাথে তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। এমনকি বেরিয়ে আসতে পারতেন। মেঘমল্লারের সাথে বোঝাপড়ার জন্য ছাত্রদল হামিমকে কুরবানি দিয়েছে। যতদূর জানা গেছে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক নেতৃত্বের কয়েকজন এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। প্রতিবেশি একটি দেশের দূতাবাসেরও ভুমিকা ছিলো। এছাড়া ভিপি ও জিএস প্রার্থী হতে আগ্রহী একজন ছাত্রদল নেতা ও একজন নেত্রী এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। তারা হামিমকে ভোট না দিতে গোপনে ক্যাম্পেইন করেছেন।
 
ছাত্র ইউনিয়ন ও বাম সংগঠনগুলোর সাথে ছাত্রদলের বোঝাপড়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। ছাত্রদল ভোট শেষ হওয়ার এক ঘন্টা আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে বাম সংগঠনগুলো ভোট শেষ হওয়ার এক ঘন্টা পর। এই সময় টুকু লেগেছে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করতে।
 
এখন বাম সংগঠনগুলো অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিবির বিরোধী একটি জোট গড়ার জন্য ছাত্রদলের সাথে অনানুষ্টানিক আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এতে বাগচাসকেও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হলো শিবির বিরোধী এই জোটের নেতৃত্ব দেবে কে? ছাত্রদল না বাম সংগঠন? হ্যা বাম সংগঠনগুলো নেতৃস্থানীয় ভুমিকা পালন করবে। ন্যারেটিভ তৈরি করবে বামরা। ছাত্রদল তাদের পরিকল্পনা মতো চলতে বাধ্য হবে। অবশ্যই এই ন্যারেটিভে মুক্তিযুক্ত, স্বাধীনতার পক্ষ - বিপক্ষ, একটা দুইটা শিবির ধর সকাল-বিকাল নাস্তা কর। এসব বিষয় চলে আসবে।
 
এই শ্লোগান ও ন্যারেটিভ যখন সামনে আসবে তখন জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী রাজাকার, উপদেষ্টা পরিষদে রাজাকারদের অবস্থান, বেগম জিয়ার সাথে গোলাম আযম ও নিজামীর ছবি। এসব নানা প্রসঙ্গ আসতে থাকবে। ছাত্রদল আসলে এই ন্যারেটিভ দিয়ে শিবির মোকাবিলা তো দূরে থাক সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কাছে টানতে পারবে না। সত্যি কথা হচ্ছে ছাত্রদল যদি নিজেদের ন্যারেটিভ তৈরি করে নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে না পারে তাহলে ছাত্র ইউনিয়নের মতো একটি ছোটো সংগঠনে পরিনত হবে।
মনে রাখতে হবে বামদের রাজনৈতিক সাফল্য হচ্ছে বড় থেকে ছোট হওয়া। অনু থেকে পরমানু হওয়া। ছোট দলের বড় নেতা হওয়া হলো তাদের টার্গেট। ছাত্রদল যদি বামের খপ্পড়ে পড়ে তাহলে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। ইতোমধ্যে জগন্নাথ হলের ভোট ও মেঘমল্লার বসুকে সমর্থন দেয়া নিয়ে ছাত্রদলের মধ্যে বিভেদ ও অবিশ্বাস বাড়ছে।