
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, মোট ৮৪টি বিষয়ের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়েছে, যদিও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। তিনি বলেন, চূড়ান্ত সনদে স্বাক্ষরের জন্য আগামী শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে প্রতিটি দলকে দুইজন প্রতিনিধির নাম মনোনয়ন দিয়ে জমা দিতে বলা হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, আজকে বাস্তবায়ন নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি, এজন্য আগামী রোববার আবারও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
তিনি আরও বলেন, ৮৪টি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ ঐক্যমত হয়েছে এবং দুই দফা খসড়া পাঠানো হয়েছে। আর চূড়ান্ত সনদের কপি রাজনৈতিক দলকে পাঠানো হবে। সকলের বক্তব্য একটি সনদে ধারণ করা যাবে না। দলগুলোকে আগামী ১৩ তারিখের মধ্যে সনদে স্বাক্ষর করতে দুইজনকে মনোনীত করে নাম পাঠাতে বলা হবে। ৬ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আজকের আলোচনায় দুইটি বিষয়ে একমত হয়েছে-এ কথা জানিয়ে সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয় এমন সংস্কার বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে, তবে সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়নে একমতে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো।
এদিকে, সকালেই বৈঠকের শুরুতে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে এমন সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, জুলাই সনদের সংবিধানের বিষয়গুলো বাস্তবায়নে দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, জুলাই সনদের সংবিধানের বিষয়গুলো বাস্তবায়নে দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়। সেগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তাঁর কিছু অংশ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠান; রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা বলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন করা; নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণপরিষদ গঠন করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থা করা; ত্রয়োদশ সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন; সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভারূপে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না।
দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল একাধিক বৈঠকে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প বিবেচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করে- এগুলো হচ্ছে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ এবং ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া।
এছাড়া জুলাই ২০২৫-এ ঘোষিত জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নে চারটি উপায়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো, অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।