
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে এমন অভিযোগ মিলেছে। কিন্তু বিষয়টি একমাস আগে বোর্ড চেয়ারম্যানের নজরে আনার পরও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং উল্টো বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। শেষ পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার ফলে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে বোর্ডের সচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এর পুনঃনিরীক্ষণের চূড়ান্ত পর্বে ফলাফল অসংগতির বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য বোর্ডের হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপপরিচালক মুহাম্মদ একরামূল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বোর্ডের উপসচিব মোহাম্মদ মোরশেদ আলম এবং সহকারী কলেজ পরিদর্শক আবুল কাশেম মো: ফজলুল হক। কমিটিকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চেয়ারম্যানের দফতরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অফিস আদেশে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের গত ১১ আগস্ট ২০২৫-এর এ সংক্রান্ত আবেদনের বিষয়টিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, পুনঃনিরীক্ষণে জিপিএ ৫ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সন্দেহ হলে উত্তরপত্র পরীক্ষা করে জালিয়াতির বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা। খাতার প্রাপ্ত নম্বরের সাথে কভার পেইজের মোট নম্বরে গরমিল পাওয়া যায়। পরে বেশক’টি খাতা পরীক্ষা করে এমন গরমিল ধরা পড়লে গত ১০ আগস্ট এই জালিয়াতির সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। শেষে সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি জানার পর তাদের তৎপরতায় দীর্ঘ এক মাস পর এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর ড. এ কে এম সামছু উদ্দিন আজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যান গত বুধবার নির্দেশনা দেয়ার পর বৃহস্পতিবার আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে অফিস আদেশ জারি করেছি।
জালিয়াতি শনাক্ত হওয়ার এক মাস পর কেন এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে বোর্ডের সচিব বলেন, ‘বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছাড়া আমরা কোনো কাজ করতে পারি না। বিষয়টি সাথে সাথেই চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি কেন এত সময় নিলেন তা আমি বলতে পারব না। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই আমি অফিস জারি করেছি।’
উল্লেখ্য, আগে গত ১০ আগস্ট এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়। পুনঃনিরীক্ষণে ১ হাজার ৬৬৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে খাতায় নম্বর পরিবর্তন হয়েছে ১ হাজার ৭৪২ জনের এবং জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ৬৪৬ জনের। এছাড়া ফেল থেকে পাস করেছে ৬৪ জন। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৫ জন।