
সামুদ্রিক জাহাজে ১৫ মাস ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন ফেনীর সোনাগাজীর যুবক আজহারুল হক সিফাত (২৮)। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ও শ্রম চুক্তি লঙ্ঘন করে তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিফাত ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চরসাহাভিখারি গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বর্তমানে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের হামরিয়াহ পোর্টের ‘ব্রাভো অ্যাঙ্করেজে’ এমটি গ্লোবাল পিস নামক একটি ট্যাঙ্কার জাহাজে আটকে রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ভাগ্য বদলের আশায় সিফাত পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানে তিনি প্রাইম ট্যাঙ্কারস নামক প্রতিষ্ঠানের অধীনে ইলেকট্রো টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন। জাহাজটির মালিক জুগবিন্দর সিং ব্রার এবং অধিনায়ক ইউক্রেনিয়ান নাগরিক আলভার্ট সেরজেই।
গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটির শেষ পণ্য খালাস হয়। সেদিনই সিফাতের চুক্তি অনুযায়ী ‘সাইন-অফ’ হয়ে দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানি ও চার্টার পার্টির আর্থিক দ্বন্দ্বের কারণে অবৈধভাবে তার পাসপোর্ট ও সিডিসি (Seafarer’s Document) আটকে রাখা হয়। ফলে সিফাত এবং অন্যান্য নাবিকদের জাহাজ ত্যাগে বাধা দেওয়া হয়।
সিফাতের পরিবার জানায়, অধিনায়ক আলভার্ট সেরজেই নিয়মিত সিফাতসহ সকল নাবিককে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। দেওয়া হচ্ছে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের হুমকি। যার কারণে সিফাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বর্তমানে ওই জাহাজে সিফাতসহ মোট ১৯ জন নাবিক আটকে রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭ জন ভারতীয়, একজন ইউক্রেনীয় এবং একজন বাংলাদেশি (সিফাত)। ভারতীয় কনস্যুলেট ইতোমধ্যে তাদের নাগরিকদের পাশে দাঁড়ালেও বাংলাদেশ দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরের সহায়তা এখনো পাননি সিফাত।
সিফাতের মা ফেরদৌস আরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “প্রতিদিন ওর ফোন পাই, কান্নায় বুক ভেসে যায়। জানি না ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা, অসুস্থ কি না। আমি একজন সাধারণ মা—দূরে বসে কিছুই করতে পারছি না। অনুরোধ করছি, আমার ছেলেকে যেন নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।”
তিনি মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ, সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যেন দ্রুত সিফাতের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়।
চরদরবেশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ঘটনাটি সত্য। আমরা স্থানীয়ভাবে অবগত আছি। সিফাতকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।”
সিফাতের বড় ভাই জুলফিকার জিয়াউল হক জানান, “চট্টগ্রাম নাবিক কল্যাণ পরিদফতর এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছি। এখন সরকারের সহযোগিতাই একমাত্র ভরসা।”
শীর্ষনিউজ