
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন্ন ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়ানো এক প্রচারপর্ব শেষ হলো রোববার। গ্রীষ্মের খরতাপও থামাতে পারেনি প্রার্থীদের। দিনভর স্লোগান, লিফলেট আর মিছিলের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।কেউ হাসিমুখে ভোট চেয়েছেন, কেউ আবার ‘প্রজেকশন মিছিল’-এ দ্রোহী সুরে ছড়িয়েছেন বার্তা। মধুর ক্যান্টিন থেকে ভিসি চত্বর, কলাভবন থেকে চারুকলা—ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তেই ছিল নির্বাচনী উৎসবের ছোঁয়া।
২৬ আগস্ট শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক প্রচারপর্ব শেষ হয়েছে রোববার রাত ১০টায়। এ সময়ের মধ্যে অংশ নিয়েছে অন্তত ১০টি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল এবং অসংখ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও উচ্চ আদালতের এক রিটের ফলে একদিন প্রচারে বিঘ্ন ঘটে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পূর্বঘোষিত ৯ সেপ্টেম্বরেই।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর তৈরি হওয়া নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবারের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে একঝাঁক নতুন মুখ। অনুপস্থিত রয়েছে ছাত্রলীগ ও তাদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলো।
ভোটের ময়দান দখলে রেখেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাগছাস, প্রতিরোধ পর্ষদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবির, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্তত ১০টি প্যানেল। প্রার্থী তালিকায় রয়েছে আন্দোলনভিত্তিক তরুণ নেতৃত্ব, যারা জুলাইয়ের রাজনৈতিক উত্তালতায় সক্রিয় ছিল।রোববার সকাল থেকেই শুরু হয় প্রচারের শেষ দিনের কার্যক্রম।
প্রতিরোধ পর্ষদ-এর জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু হুইলচেয়ারে করে অংশ নেন প্রচারে। অসুস্থতা সত্ত্বেও ভোটারদের প্রতি তার আহ্বান ছিল আবেগঘন। ছাত্রদল তাদের প্রার্থীদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কলা অনুষদ, চারুকলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে। বাগছাস মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে। ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, এবং অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪সহ অন্যান্য প্যানেলও চালিয়ে যায় শেষ মুহূর্তের প্রচারণা।
সন্ধ্যার পর প্রজেকশন মিটিং, মিছিল, পোস্টারিং—সব মিলিয়ে ছিল যেন রাজনৈতিক উৎসবের শেষ ঝলক।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ চলবে।
???? মোট ভোটার: ৩৯,৮৭৪
???? ছাত্র হলে: ২০,৯১৫ | ছাত্রী হলে: ১৮,৯৫৯
???? ডাকসু প্রার্থী: ৪৭১ জন
???? হল সংসদ প্রার্থী: ১,০৩৫ জন
নির্বাচনে এবারও থাকছে ওএমআর ব্যালট। পাশাপাশি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল ব্যালট ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে—বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।১৩ দিনের প্রচার শেষ, এখন অপেক্ষা কেবল ভোটগ্রহণের। উত্তাপ-উদ্দীপনার এই ক্যাম্পাস এখন গুনছে সময়—নতুন নেতৃত্ব, না কি পুরোনো আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, জয়ের মুকুট উঠবে কার মাথায়? সিদ্ধান্ত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই।
শীর্ষনিউজ