
রাজধানীর কাঁচাবাজারে স্বস্তি নেই ক্রেতা-বিক্রেতার। ক্রেতাদের মুখভার, আর বিক্রেতার অসহায় ভঙ্গি। সবমিলিয়ে বাজারের পরিবেশ এক অদ্ভুত চাপের সৃষ্টি করেছে। বাজারে ভিড় থাকলেও মানুষ পকেট থেকে টাকা বের করতে কষ্ট পাচ্ছে। মাছ, মাংস, সবজি, ডিম যা-ই কিনতে যান না কেন, দাম শুনলেই অনেকে মাথা নাড়িয়ে ফিরে আসছেন। ক্রেতাদের মতে, এ লড়াই শুধু খাবার কেনার নয়, বরং বেঁচে থাকারও লড়াই। আর এ লড়াইয়ে প্রতিদিনের জনজীবন আরও হাঁসফাঁস হয়ে উঠছে।
বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক ইলিশ এখন গরিব-ধনী সবার জন্যই বিলাসপণ্য। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। মাঝারি আকারের ইলিশের দামও ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকার নিচে নামছে না। অন্যান্য মাছও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। তুলনামূলক সস্তা মাছ পাঙাশ, তেলাপিয়া বা সিলভার কার্পও এখন ২০০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজি এক সময় মধ্যবিত্তের স্বস্তির জায়গা ছিল। এখন সেখানেও হাত বাড়াতে হচ্ছে সতর্ক হয়ে। আলু বা কাঁচা পেঁপে ছাড়া সব সবজি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো সবজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। শুধু মাছ বা সবজি নয়, ডিম-মুরগির দামও কমছে না। মোহাম্মদপুরের গৃহিণী হাসিনা খাতুন বলেন, বাজারে যাওয়ার আগে এখন বারবার হিসাব কষি। আগে যেখানে মাছ-মাংস, সবজি সবই কেনা যেত, এখন বেছে বেছে কিনতে হয়। ১ হাজার টাকা নিয়ে বের হলে ফিরতে গিয়ে মনে হয় কিছুই আনা হলো না।
মগবাজারের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, বেতন তো একই আছে, কিন্তু খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ছেলেমেয়ের দুধ বা ডিম আনতে গেলে নিজেরা অনেকটা না খেয়েই থাকি। মাসের শেষে ধার না করলে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এখন শুধু অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে না, বরং মানুষের মানসিক অবস্থাকেও নড়বড়ে করে দিচ্ছে। বিশেষত নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। পরিবার চালাতে গিয়ে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ধার করতে। কেউ কেউ আবার খরচ সামলাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার কমিয়ে দিচ্ছেন। বাজারের এ অস্থিরতা কেবল অর্থনীতির সমস্যা নয়, সামাজিক সমস্যাতেও রূপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষ যখন প্রতিদিন খাবারের জন্য হিসাব কষতে বাধ্য হয়, তখন তা তাদের জীবনমান, মানসিক স্বস্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপরও প্রভাব ফেলে। শিশুর পড়াশোনা থেকে শুরু করে চিকিৎসা সব জায়গাতেই কমতি টানতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। সরবরাহে ঘাটতি নেই, তবু দাম বাড়ছে অব্যাহতভাবে। এর নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করেন ক্রেতারা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। আয় না বাড়লেও ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ চাপ সবচেয়ে বেশি অনুভব করছে।