
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত আছে মাত্র পাঁচ বছরের। ২০৩০ সালের মধ্যেই এ মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানেও নেই অগ্রগতি। উচ্চ দামে এলএনজি কিনতে হলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের উৎপাদন কমছে। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ঘুরছে না শিল্পকারখানার চাকা। ঠিকমতো জ্বলছে না বাসাবাড়ির চুলা। নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান না পেলে এবং নতুন খনি থেকে উত্তোলন শুরু না হলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভরতা বাড়বে। ভুক্তভোগী হবে শিল্প খাত। উচ্চ দামে এলএনজি কেনায় বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়।
গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার স্থলভাগে পুরোনো ৫০টি ও নতুন করে ১০০টি কূপ খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানেও অগ্রগতি নেই। এ জন্য ২০৩০ সাল আসার আগেই প্রাকৃতিক গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে সরকারকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে দেশি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দিনে ১৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। ২০১৭ সালে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হতো। দেশি গ্যাসের প্রতি ইউনিটের (ঘনমিটার) দাম তিন টাকার মতো। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম ৫৫ টাকা। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) সর্বশেষ সমীক্ষা (২০১০) অনুযায়ী দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত আছে ২৮ দশমিক ৭৯ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন বা লাখ কোটি ঘনফুট)। ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৩৩ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বাকি আছে প্রায় ৯ (৮ দশমিক ৪৬) টিসিএফ গ্যাস। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ২০৩০-এর পর প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ এতই কমে যাবে যে বাণিজ্যিকভাবে তা ব্যবহার করা যাবে না। কোনো কারণে এটি কয়েক বছর পেছাতে পারে। গ্যাস শেষ হলে এলএনজি ব্যবহারের হার বাড়বে। শিল্পে প্রভাব পড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। দেশের ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে উৎপাদনে আছে ২০টি। ভোলার ইলিশা ও ভোলা নর্থ; সিলেটের জকিগঞ্জ এবং কুতুবদিয়া থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে না। কারণ পাইপলাইন ও অবকাঠামো তৈরি হয়নি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সিলেটের ছাতক, গাজীপুরের কামতা, ফেনী ও চট্টগ্রামের সাংগু- এই পাঁচ খনিতে ৬৬১ বিসিএফ গ্যাস থাকা অবস্থায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এগুলো বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয়। দেশের গ্যাস খাতে সরবরাহ ও মজুত বাড়াতে স্থলভাগের চার গ্যাস ক্ষেত্রে ড্রিলিং বা গভীর কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি কূপে ১৫ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পেট্রোবাংলার তথ্যে, অন্তর্বর্তী সরকার ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভারের প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩১টি পুরোনো কূপ সংস্কারে জোর দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ। ২০২২ সালে তৎকালীন সরকার ৫০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়। এসবে কাজ চলমান। জ্বালানি বিভাগ আশা করছে, দুই-তিন বছরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বছরে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি গ্যাস। বছরে ২ হাজার এমএমমিএফডি গ্যাসের সরবরাহ ধরে রাখতে হলে বছরে অন্তত ১০টি কূপ খনন করতে হবে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতির সভাপতি ড. বদরুল ইমাম বলেন, পৃথিবীতে যেসব বদ্বীপ এলাকা আছে সেখানে প্রাকৃতিক জ্বালানি থাকে। বাংলাদেশেও থাকার কথা। পাঁচ বছরের মধ্যে ১০০ কূপ খনন করে ভালো কিছু দেখাতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।