
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরকে একটি আঞ্চলিক যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ছয়টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে চীনা সম্পৃক্ততা রয়েছে। এগুলো হলো- মোংলা বন্দরের সুবিধাদী সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশটির এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দ্রুত ঋণ চুক্তি করতে যোগাযোগ বাড়ানো এবং মোংলা ইপিজেডে চীনা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুবিধা আরও সহজ করা।
সূত্র জানায়, গত ৬ আগস্ট নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে যে ছয়টি সিদ্ধান্ত তার দুটি ছিল চীন-সম্পৃক্ত। এ ছাড়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো ছিল- মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পটির উদ্বোধন; মোংলা বন্দরের দুটি অসমাপ্ত জেটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় নির্মাণ বিষয়ে লিগ্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটি দ্রুত গঠন; পশুর চ্যানেল সংরক্ষণে ড্রেজিংয়ের জন্য নৌবাহিনীর সঙ্গে দ্রুত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং দেশে আমদানিকৃত গাড়ি মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাসের ব্যবস্থা গ্রহণ। সূত্র জানায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটো প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। সেগুলো হলো- মোংলা বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ‘দুটি ক্রুড অয়েল ট্যাংকার এবং দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প। এর মধ্যে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত প্রকল্পটিতে চীনা অর্থায়নের ওপর এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কেন না, সরকার মনে করছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। আবার চীনও মোংলা বন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
মোংলা ইপিজেডে চীনের বিনিয়োগ সহজ করা : চলতি বছরেই মোংলা ইপিজেডে চীনা দুটি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ‘সেইফটি গার্মেন্টস বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড’-এর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে একটি চীনা কোম্পানি মোংলা ইপিজেডে প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যে বেপজার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেনশিন বিডি কোম্পানি লিমিটেড নামে এ কোম্পানিটি মোংলা ইপিজেডে বিভিন্ন ধরনের এলইডি বাল্ব ও প্যাকিং-সামগ্রী তৈরির কারখানা স্থাপন করবে। মোংলা ইপিজেডে চীনের বিনিয়োগ আরও সহজ করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, বিনিয়োগ সহজীকরণের সঙ্গে মোংলা বন্দরের সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত। সে কারণে মোংলা বন্দর সুবিধা সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পে চীনের ঋণ চুক্তির বিষয়ে জোর দিচ্ছে সরকার।
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা চীনের : মোংলা বন্দরের কনটেইনার পরিচালন ক্ষমতা বাড়াতে এবং এটিকে আধুনিক ও বিশ্বমানের নৌ-যোগাযোগ কেন্দ্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয় সরকার। ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদী সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি-২০২৫ থেকে ডিসেম্বর-২০২৮ পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য আধুনিক বন্দর সুবিধাসহ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ প্রকল্পটিতে ৪৭৫ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং বাকি ৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা চীনের কাছ থেকে নেওয়ার কথা। ওই টাকার জন্য ঋণ চুক্তি করতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ঋণচুক্তি না হওয়া অবধি প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গত ৬ আগস্ট ভার্চুয়াল মিটিংয়ে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর গত ২০ আগস্ট চীনা এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং-এর সঙ্গে বৈঠকও করেন নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া দেশটির এক্সিম ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বন্দর পরিদর্শন করে গেছে। এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (জনসংযোগ) কালাচাঁদ সিংহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা পরিদর্শন দলের রিপোর্টের অপেক্ষা করছি আমরা। রিপোর্ট দেওয়ার পর দ্রুত চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।