Image description

দেশের বৃহত্তর ও ৫৪তম ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস বন্দরনগরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল দশটার পর নগরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে শুরু হওয়া জশনে জুলুসে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

জুলুসকে ঘিরে নগরের ষোলশহর, বিবিরহাট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, জিইসি, লালখান বাজার, ওয়াসাসহ আশেপাশের এলাকাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তাদের কণ্ঠে ‘আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে বন্দর নগরী। আয়োজকদের জানিয়েছেন, এবারের জুলুসে ৪০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটেছে।

সকাল আটটা থেকে জুলুস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোর ছয়টা থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার গাউসিয়া কমিটি, আনজুমান পরিচালিত মাদ্রাসা, জেলার বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে লাখ লাখ মানুষ শহরে ভিড় করে। এসময় তারা কালেমা খচিত পতাকা, মাথায় বিশেষ টুপি ও পাঞ্জাবি পড়ে জুলুসে অংশগ্রহণ করে। বিশেষ করে জুলুসে অংশ দেশবিদেশের নানা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম নগরে আসতে লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরের মুরাদপুর থেকে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটে জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা জিইসি মোড়ে দিকে আসছেন। এসময় অনেকেই শরবত, পানি, রুটি, জিলাপি, খেজুর, কলা, চকলেট দিয়ে আপ্যায়ন করছেন ভক্তদের। তাদের কেউ গাড়িসহ পানি ও খাবার বিলি করছেন। আবার কেউ স্টল বসিয়ে বিলি করছেন। অংশগ্রহণকারীরা সাদরে এসব গ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত। জুলুসে লাখো আশেকে রাসূল হামদ, নাতে রাসূল, দরুদ ও স্লোগানে কণ্ঠ মেলাতে মেলাতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন।

জুলুস উপলক্ষ্যে ষোলশহর এলাকায় ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্যের মেলা। মেলায় আতর, টুপি, তসবিহ, পাঞ্জাবি, ইসলামি বই, খাবার, শরবত, দেশি ফলমূল, চা, নাশতা, বিরিয়ানি, পতাকা, মাথার ফিতা, ব্যাজ ইত্যাদি বিক্রি করছেন। এই জুলুস উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহ আগে থেকে জুলুসকে স্বাগত জানিয়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও আনজুমানের পতাকায় সেজেছে অলিগলি। বর্ণিল সাজে সাজ সাজ রব নগরের পাড়া-মহল্লাগুলোও। জুলুসে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে৷

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জুলুসটি বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি ঘুরে একই পথে ফিরে আসবে জামেয়া মাদ্রাসার জুলুস মাঠে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শরিয়ত সম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে এবারের জুলুসে জাতীয় পতাকা, আনজুমান ট্রাস্টের পতাকা ছাড়া অন্য পতাকা, ড্রাম সেট আনা, নারীর অংশগ্রহণ ও খাবার নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবারও জুলুশের সমাপ্তিস্থল জামিয়া আহমদিয়া মাদ্রাসা মাঠকে ঠিক করা হয়েছে। সেখানে মহফিল, জোহর নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হবে।

আনজুমানের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, জুলুসের সার্বিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও নির্ধারিত স্বেচ্ছাসেবকদের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আগেই। বিশেষ করে আনজুমান ট্রাস্ট ঘোষিত নিয়ম মেনে চলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

রাসুলের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন এবং বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন।

আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের পনেরশ’ বছর পূর্তি এ বছর। একইসঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এ জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।