Image description
গাজীপুরে বেড়েছে একটি, কমেছে বাগেরহাটে

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৫০টিতে ব্যাপক অদলবদল হয়েছে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ একাধিক আসনে অদলবদল হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে গাজীপুরে একটি আসন বেড়েছে আর কমেছে বাগেরহাটে। এদিকে বৃহস্পতিবার গেজেট প্রকাশের পরই ফরিদপুর ও বাগেরহাটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার অনেকে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানান, সীমানা নির্ধারণ আইন মেনে ও ভোটার সমতা আনতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতামতের পরিপেক্ষিতে বিশেষায়িত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী ৩০ জুলাই ৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ৩৯ আসনে পরিবর্তন এনে খসড়া প্রকাশ হলেও পরে ৮৪টির বিষয়ে দেড় সহস্রাধিক দাবি-আপত্তি আবেদন পড়ে।

এক মাসের মধ্যে দাবি-আপত্তি নেওয়ার পর শুনানি শেষে তা চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের যে সীমানায় ভোট হয়েছিল, একই সীমানা এবার আড়াই শতাধিক আসনে বহাল রয়েছে। আর প্রায় অর্ধশত আসনে পরিবর্তন এসেছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সম্পূর্ণ পেশাদারি দিয়ে আইন মেনে, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আসনওয়ারি নির্বাচন প্রস্তুতি এবং ভোটার তালিকা থেকে অন্য সব কাজ আরও দৃশ্যমান হলো।’

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সীমানা নির্ধারণে আর ক্ষোভ ও আন্দোলনের সুযোগ নেই। এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েও লাভ হবে না। সীমানা পুনর্নির্ধারণের এখতিয়ার ইসির, এ নিয়ে কারও প্রশ্ন রাখার আর অবকাশ নেই। আসনওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পঞ্চগড়-১ ও ২ আসনের খসড়া সীমানায় যে প্রস্তাব দিয়েছিল ইসি, তা নিয়ে আপত্তির পর ফের পরিবর্তন হয়েছে। একটি পৌরসভার ওয়ার্ড সমন্বয় করা হয়েছে। রংপুর-১ আসনের সীমানা আগের মতো রাখতে চেয়েছিল ইসি। শুনানিতে আপত্তি আসায় একটি ওয়ার্ড যুক্ত করে পরিবর্তন এনেছে। সে হিসেবে রংপুর-৩ আসনে সেনানিবাস এলাকা যুক্ত করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-১ ও ২ আসনে কমিশন যেভাবে পরিবর্তন এনে খসড়া সীমানা দিয়েছিল, দাবি-আপত্তি আমলে না নিয়ে সেটি চূড়ান্ত করেছে।

পাবনা-১ ও ২ আসন আগের মতো রাখতে চাইলেও আপত্তির মধ্যে ইউনিয়নগুলো বাদ দিয়ে উপজেলার অখণ্ডতা রেখে সীমানায় পরিবর্তন এনেছে ইসি।

এদিকে বাগেরহাটে চার আসনের একটি কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট-১ আসন আগের মতো রেখেছিল; কিন্তু শুনানির পর সদর উপজেলা বদল করে নতুন সীমানা চূড়ান্ত করে। একটি আসন কমানোয় দাবি-আপত্তির মধ্যে খসড়া সীমানায় পরিবর্তন এনে ফকিরহাট ও কচুয়া উপজেলা বাগেরহাট-২ ও ৩ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সাতক্ষীরা-২, ৩ ও ৪ আসনে ইউনিয়ন ভাগাভাগি না করে উপজেলার অখণ্ডতা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-২ আসন আগের মতো একটি উপজেলা নিয়ে করতে চেয়েছিল ইসি। চূড়ান্তভাবে এ আসনে আরেকটি উপজেলা যুক্ত করা হয়। সাতক্ষীরা-৩ ও ৪ আসনে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার অখ তা রেখে খসড়া সীমানা রাখলেও সরে এসেছে কমিশন। সে ক্ষেত্রে ভোটার সমতা রাখতে একটি উপজেলাকে অন্য আসনে যুক্ত করে সীমানা চূড়ান্ত হয়।

মানিকগঞ্জ-২ ও ৩ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতোই রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত গেজেটে একটি ইউনিয়ন অদলবদল করা হয়।

ঢাকা-২, ৪, ৫, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিল ইসি। এর মধ্যে আটটি আসন নিয়েও দাবি-আপত্তি আসে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-৩ আসন আগের সীমানায় ফিরেছে। ঢাকা-২ আসনের তিনটি ইউনিয়ন ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৯ আসনে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে কাউন্দিয়া, বনগাঁও ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন। বাকি চারটি আসন খসড়ায় যে পরিবর্তন চেয়েছিল, কারও আপত্তি আমলে না নিয়ে তা বহাল রাখে ইসি।

গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর-৪ আসনটি আগের সীমানায় রেখে বাকি চারটিতে যে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছিল; তাতে ওয়ার্ড অদলবদল হয়েছে। চূড়ান্ত গেজেটে উপজেলা অখ রেখে ওয়ার্ড সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন গাজীপুর-৬ আসনে দেওয়া হয়েছে সিটির ২৩টি ওয়ার্ড।

নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনেই পরিবর্তন চেয়েছিল ইসি। শুনানিতে এলাকাবাসীর দাবি-আপত্তির পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সিটির ১০টি ওয়ার্ড ও বন্দর উপজেলা নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৫ আসনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি ইসি যেমন প্রস্তাব করেছিল তেমনি রেখেছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয় আলগি ও হামিরদি ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনে অখণ্ড উপজেলা রাখতে চেয়েছিল ইসি। শুনানির পর ভেদরগঞ্জের নয়টি ইউনিয়ন একটি আসনে, বাকি চারটি ইউনিয়ন আরেকটি আসনে যুক্ত করেছে।

সিলেট-১ ও ৩ আসনটি বিগত সংসদ নির্বাচনের সীমানায় ফিরে গেছে ইসি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনটি বিগত নির্বাচনের সময়ও অখ উপজেলা ছিল। এবার ইসি বিজয়নগর উপজেলার ইউনিয়ন দুটি আসনে ভাগ করে খসড়া প্রকাশ করে। দাবি-আপত্তি শুনে বিজয়নগর উপজেলার বুধস্তি, চান্দুরা ও হরষপুর ইউনিয়ন একটি আসনে, বাকি আটটি ইউনিয়ন অন্য আসনে অন্তর্ভুক্ত করে।

কুমিল্লা-১, ২, ৬ ও ১০ আসনে পরিবর্তন এনে খসড়া করেছিল ইসি। এর মধ্যে শুনানির পরও কুমিল্লা-১, ২, ১০ আসন ইসির প্রস্তাবই বহাল রেখেছে। পাশাপাশি কুমিল্লা-১১ আগের সীমানায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সদর দক্ষিণ উপজেলা কুমিল্লা-৬ আসনে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ আসনে সদর উপজেলা ও সুনাইমুড়ীর কিছু ইউনিয়ন ভাগাভাগি করে পরিবর্তন এনে খসড়া প্রকাশ করেছিল। আপত্তি শুনানি আমলে না নিয়ে একই সীমানা চূড়ান্ত করেছে ইসি। চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ আসন ইসি যেমন প্রস্তাব করেছিল, চূড়ান্ত সীমানায় তা-ই বহাল রাখা হয়েছে।