
স্ত্রীর গায়ের রং কালো হওয়ায় পুড়িয়ে মারার ঘটনায় আট বছর পর স্বামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরের একটি আদালত। মৃত্যুর আগে স্ত্রী লক্ষ্মী বলেছিলেন, তার স্বামী ক্রীষ্ণণা তাকে সবসময় ‘কালি’ বলে রাগাতেন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ভুক্তভোগী লাকশমী ও ক্রীষ্ণণা দাস। স্ত্রী কালো হওয়ায় নানানভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন স্বামী ক্রীষ্ণণা দাস।
২০১৭ সালের এক রাতে স্ত্রী লাকশমীর জন্য বোতলে বাদামি রঙয়ের তরলজাতীয় পদার্থ নিয়ে আসে তার স্বামী। ক্রীষ্ণণা জানায়, এই তরল মেডিসিনই তাকে ফর্সা বানিয়ে দিবে।
সরল মনে লাকশমী তার স্বামীর কথা বিশ্বাস করেন এবং গায়ে মাখা শুরু করেন। তিনি তাতে এসিডের গন্ধ পান। এর পরপরই স্বামী ক্রীষ্ণণা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পালিয়ে যায়।
মৃত্যুর আগে হাসপাতালে পুলিশকে তিনি তার ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতার বর্ণনা দেন। দীর্ঘ আট বছর পর এই সপ্তাহে ভারতের উদয়পুরে জেলা কোর্ট ক্রীষ্ণণা দাসকে মৃত্যুদন্ড দেয়।
বিচারক রাহুল চৌধুরী এই রায়ের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এই খুনটা ‘সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের’ মধ্যে পড়ে। পৃথিবীতে এমন ঘটনা খুবই বিরল। এটি শুধু একটা খুন নয়, এটা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’।
বিচারক আরও বলেন, কিষাণদাস লক্ষ্মীর বিশ্বাস ভেঙেছেন এবং যখন তার শরীরে আগুন জ্বলছিল, তখন বাকি তরলটুকু গায়ে ঢেলে তিনি চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছেন। আদেশে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের অপরাধ কোনো সুস্থ সমাজে কল্পনা করা যায় না। এটা মানবতাকে লজ্জাকর।
সরকারি আইনজীবী দীনেশ পালিওয়াল এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই রায় সমাজের অন্য মানুষের জন্য ‘একটা শিক্ষা’ হবে।
আইনজীবী দীনেশ প্রশ্ন তুলে বলেন, ২০ বছর বয়সী একটা মেয়েকে খুব নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে। সে তো কারও বোন ছিল, কারও মেয়ে ছিল, কিছু মানুষ তাকে ভালোবাসত। আমরা যদি আমাদের মেয়েদের রক্ষা না করি, তাহলে কে রক্ষা করবে?
দীনেশ আরও বলেন, তিনি হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য আদেশটি পাঠিয়েছেন। তবে, আসামি ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।