Image description
 

গাজায় আগ্রাসন থামাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করলেও কার্যত কিছুই করতে পারেনি মিশর। তবে নিজেদের উপর ইসরায়েলি হুমকি আসতেই শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে আবদেল ফাত্তা আল-সিসির সরকার। গাজার সীমান্তঘেঁষা সিনাই উপদ্বীপে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে কায়রো। সিসি সরকারের এমন পদক্ষেপে রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

 

ইসরায়েলের দৈনিক হায়ামের বরাতে আল-মায়াদিন জানিয়েছে, মিশরকে বড় ধাক্কা দিয়ে নেতানিয়াহু সরকার ৩৫ বিলিয়ন ডলারের 'লেভিয়াতান' গ্যাস রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এমনকি তার ব্যক্তিগত অনুমোদন ছাড়া এই চুক্তি কার্যকর হবে না।

রাজনৈতিক চাপ ও কূটনৈতিক বিরোধ
তেল আবিবের এই পদক্ষেপ এমন এক সময় এলো যখন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জোরেশোরে কথা বলতে শুরু করেছে কায়রো। গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের জারি করা আদেশে মিশর জোরালো সমর্থন দিচ্ছে।

 

মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই লেভিয়াতান প্রকল্পের অংশীদার রেশিও ও নিউমেড এনার্জি মিশরের ব্লু ওশান এনার্জির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। এর আওতায় ২০৪০ সাল পর্যন্ত ৩০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল সরকার প্রকাশ্যে গ্যাস বিক্রিকে রাজনৈতিক চাপে রূপান্তর করেছে। তাদের লক্ষ্য, গ্যাস সরবরাহের বিনিময়ে মিশরের কাছ থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিশ্চয়তা আদায় করা।

 

গ্রেটার ইসরায়েল পরিকল্পনা ও সিনাইয়ে সেনা মোতায়েন
২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে মিশর একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার শর্ত অনুযায়ী পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গ্যাস ইউরোপে রপ্তানি করে তারা। এর ফলে মিশরের নিজস্ব জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা দুর্বল হয়ে ইসরায়েলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। ইসরায়েল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসকে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগ্রামে একটি জবরদস্তির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

নেতানিয়াহুর 'গ্রেটার ইসরায়েল' পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। এই পরিকল্পনায় সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান এবং মিশরের কিছু অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। এই নীল নকশা প্রকাশ্যে আসার পর মিশর সিনাই উপদ্বীপে নিরাপত্তা জোরদার করে। সিসি সরকার সেখানে ৪০০ মিশরীয় সেনা মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে সাঁজোয়া যান এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে। এই সংখ্যা মিশর-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। কায়রো আশঙ্কা করছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ফিলিস্তিনিদের মিশরের সিনাই উপদ্বীপে ঠেলে দিতে পারে।