Image description
 

প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের সিংহাসনে বসেন সালমান বিন আব্দুল আজিজ। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতার এই পালাবদল মোটেই সহজ ছিল না। এটি ছিল নাটকীয় সিদ্ধান্ত আর অপ্রত্যাশিত উত্থানের এক নতুন অধ্যায়।

 

শুরুতে বাদশাহ সালমান ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে তার ৬৯ বছর বয়সী সৎ ভাই মুকরিন বিন আব্দুল আজিজের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরেই তিনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদল করেন। মুকরিনকে সরিয়ে তার স্থানে নিয়ে আসেন নিজের ভাইপো ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। একই সঙ্গে, মাত্র ২৯ বছর বয়সী নিজের পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। সেসময় রাজনীতির অঙ্গনে মোহাম্মদ বিন সালমান (MBS) এর নাম খুব বেশি পরিচিত ছিল না। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তই তাকে সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

মোহাম্মদ বিন নায়েফের উত্থান ও পশ্চিমা সমর্থন
অন্যদিকে, মোহাম্মদ বিন নায়েফ ততদিনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসিত ছিলেন। মার্কিন প্রশাসন তাকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে একজন নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে দেখত। প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাস দমনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তার কৌশলগত দক্ষতার কারণে পশ্চিমা বিশ্বে তিনি আলাদা গুরুত্ব অর্জন করেছিলেন।

 

তবে তার পথ ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০৯ সালের আগস্টে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ সেই হামলার জন্য আল-কায়দাকে দায়ী করে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পরও তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই চালিয়ে যান।

 

ক্ষমতার মানচিত্রের পরিবর্তন
এক দশক পর বাদশাহ সালমানের সেই সিদ্ধান্তগুলো সৌদি আরবের ক্ষমতার মানচিত্র পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। প্রায় অজানা এক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ধীরে ধীরে পরিণত হন ক্ষমতার সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখে। আর পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট মোহাম্মদ বিন নায়েফ উত্তরাধিকারী হলেও তার রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে থাকে।

এই নাটকীয় পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৌদি রাজতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়, যা বর্তমান সৌদি আরবের রাজনৈতিক ও সামাজিক দিকনির্দেশনা অনেকটাই বদলে দিয়েছে।