
প্রবাসীদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর কানাডা থেকে শুরু যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার কার্যক্রমের ট্রায়াল রান। যা প্রত্যক্ষ করতে সরকারি সফরে কানাডা যাচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সঙ্গে জেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তা। সরকার ও ইসির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবিটি দুই যুগের বেশি সময়ের। এরমধ্যে অনেক শাসক ও সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিটি সেই তিমিরেই রয়ে গেছে!
দেশের প্রায় সোয়া কোটি প্রবাসী তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগের জন্য মুখিয়ে আছেন জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ করে ’২৪-এর রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার প্রবাসীদের যৌক্তিক এবং দীর্ঘদিনের দাবিটি বাস্তবায়নে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। ৯টি দেশে থাকা ৪৮ হাজার ৮০ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জন্য আবেদন করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা অত্যাসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোনো পদ্ধতিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। দেশ মাতৃকার জন্য বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে নিজের পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে মজবুত করে তুলতে ভিন দেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করা প্রবাসীরা ভোট-বঞ্চনার কারণে রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নিজেদের অংশীদারিত্ব অনুভব করতে পারছে না। অতীতের সরকারগুলোর উদাসীনতাই এই বঞ্চনা তথা সংকটের মূল কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবাসী নেতারা।
প্রবাসীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণের ট্রায়াল রানের উদ্যোগ নেয়ার ইসি এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সেন্টার ফর এনআরবি। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের এই উদ্যোগকে প্রবাসীদের ভোটাধিকারে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাশাপাশি এটি ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছি। কারণ অবস্থানগত কারণে প্রবাসীরা খানিকটা চাপ এবং ভয়ের ঊর্ধ্বে। তবে তিনি বলেন- কোন পদ্ধতিতে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এটা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি পোস্টাল ব্যালটে হয় তাহলে বেশির ভাগ (৬০-৭০ ভাগই শ্রমজীবী) ভোট দিতে যাবেন না। অনলাইনে হতে পারে কিনা? তা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত। কিন্তু এটি যে শুরু হচ্ছে- এটা কিন্তু বড় খবর। এজন্য সংশ্লিষ্টরা প্রবাসীদের তরফে নিশ্চয়ই সাধুবাদ পেতে পারেন। আমি তো খুশিই।
সিইসি’র কানাডা সফর এবং...
এদিকে সিইসি’র কানাডা সফর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপ-সচিব মো. শাহ আলমের সই করা নতুন অফিস আদেশ জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়- আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর সিইসি সরকারি সফরে কানাডা অবস্থান করবেন। সফরকালে কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভোটার নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করবেন তিনি। তিনি টরন্টো ও অটোয়ায় ভোটার নিবন্ধন কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। সেখানে প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। ওই অফিস আদেশ মতে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটদান প্রক্রিয়ায় (দেশের বাইরে ভোটদান) সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্য টরন্টো ও অটোয়াতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একটি সভায় যোগদান করবেন সিইসি।
১৩ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর তিনি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ব্যক্তিগত খরচে অবস্থান করবেন। লালমনিরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. লুৎফুল কবির সিইসি’র সরকারি সফরের সঙ্গী হিসেবে থাকবেন। স্মরণ করা যায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে কী কী দলিল প্রয়োজন হবে, তা নির্ধারণ করে একটি পরিপত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টধারীদেরও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ইসি সূত্র জানায়, পরিপত্রটি সংশ্লিষ্ট সব হাইকমিশনার/রাষ্ট্রদূত বরাবরও পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভোটার হতে সবমিলিয়ে ১১ ধরনের দলিল প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে সব দলিল সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পরিপত্রে বলা হয়, অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্রের তথ্যসংশ্লিষ্ট ভোটার এলাকার নির্বাচন কর্মকর্তার সরজমিন তদন্ত প্রতিবেদন আবশ্যক হবে।