Image description
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় অ্যাকশনে বিএনপি

দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল বিএনপি। গত এক বছরে নানা অভিযোগে সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। হেভিওয়েট নেতাদের নামও এ তালিকায় রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও কঠোর হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক শাস্তির আওয়ায় আনা হচ্ছে নেতাকর্মীদের। বিএনপির সিনিয়র নেতারাও এ শাস্তির আওতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ভেঙে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ইউনিটের কমিটিও। এদিকে বহিষ্কার কিংবা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে দলটির দপ্তরে দেড় হাজারের অধিক আবেদন জমা পড়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি দলীয় আদর্শ রক্ষায় অটল। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী বহিষ্কার হয়েছেন। শতাধিক নেতাকর্মীর দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদের কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা সতর্ক করা হয়েছে। দল এমন অ্যাকশনে থাকার পরও প্রায় প্রতিদিনই দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে। এতে ক্রমেই বাড়ছে বহিষ্কারসহ শোকজের সংখ্যা। সর্বশেষ ২৬ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের দলীয় পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাচ্ছি, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকেও তথ্য নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দলের নাম ভেঙে যারা অপকর্ম করছে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করছে, তাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হচ্ছে। কেন্দ্র থেকেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা জেলা পর্যায়েও বলে দিচ্ছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। ৫ আগস্টের পর থেকে এটা অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, যারা সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনায় জন্য আবেদন করেছেন, তাদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠন সূত্র আরও জানায়, শুধু বিএনপির ২ হাজারের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বহিষ্কার হয়েছেন সাড়ে আটশ। সদস্যপদ স্থগিত আছে ৬০ জনের কাছাকাছি। সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এর মধ্যে বহিষ্কার সাড়ে চার শতাধিক। ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অন্তত শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী। সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে আরও কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীকে। এছাড়া শ্রমিক দল ও মহিলা দলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের আরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অন্তত আরও ৩ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

এই সময়ে সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনার জন্য দলের কাছে দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মী আবেদন করেছেন। তবে এসব আবেদনে এখনই সাড়া দিচ্ছে না বিএনপি। বিগত দেড় দশকের আন্দোলন সংগ্রামে দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক ত্যাগী নেতা বলছেন, সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যাদের বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে, তাদের সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনার সময় এখনো আসেনি। দল কঠোর অবস্থানে থাকার কারণে এসব আবেদনে সাড়া দেওয়া হচ্ছে না। এতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে দলের কঠোরতার বার্তা যাচ্ছে-যে দলের নাম ভাঙিয়ে কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে ছাড় পাওয়া যাবে না। এমনকি বিএনপি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়ার শঙ্কা থাকছে।

শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বহিষ্কার হওয়া এমন অন্তত তিনজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছি। কোনো সাড়া পাইনি। এতে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ থেকে বিরত থাকছি। দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, অনেককে শাস্তিস্বরূপ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অনেকে নানা ষড়যন্ত্রের শিকারও হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ সাংগঠনিক শাস্তি পুনর্বিবেচনায় আবেদন করেছেন। আমরা আপাতত সেদিকে নজর দিচ্ছি না। এদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে।

৬ জুন দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতিপরিপন্থি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গাজীপুর মহানগরের চার নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন, সংঘাত-হানাহানি সৃষ্টি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২৯ জুলাই একদিনেই ২০ নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ওইদিন চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীর প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করে।