Image description
ফরহাদের বিরুদ্ধে বামনেত্রীর রিট

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বিতর্কিত অনুষ্ঠান ও ইশতেহার ঘোষণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদল সমর্থিত জোট। অন্যদিকে শিবিরপন্থি প্রার্থীরা বলছে, তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলে এসএম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়েছে। রিটটি দায়ের করেছেন বামজোট মনোনীত ‘অপরাজেয় ৭১’ ও ‘অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম। একইদিনে বাম সংগঠনসমূহের সমর্থনে প্রতিরোধ পর্ষদ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। 

ছাত্রদলের অভিযোগ, ফোকাস নবীনবরণে ভোট চাওয়া, খাদ্য ও উপহার বিতরণ করছে। গতকাল বিকাল ৪টায় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করা হয়। চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন এজিএস পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ। অভিযোগে বলা হয়, ২৯শে আগস্ট শেরাটন হোটেলের বিপরীতে অবস্থিত শহীদ আবু সাঈদ অডিটোরিয়ামে ফোকাস কোচিং সেন্টারের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম, জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ও এজিএম প্রার্থী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন খান সরাসরি উপস্থিত হয়ে ভোট চান। একইসঙ্গে নবীন শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও উপহার প্রদান করা হয়। ছাত্রদল দাবি করে, এটি নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির ধারা ৯-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ধারায় প্রার্থীদের ভোটারদের উদ্দেশ্যে কোনো খাদ্য, পানীয় বা উপঢৌকন দেয়ার সুযোগ নেই। তাদের অভিযোগ, ‘ফোকাস নবীনবরণ আসলে ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণার প্ল্যাটফরমে পরিণত হয়েছে, যা নির্বাচনী পরিবেশের ন্যায্যতা ক্ষুণ্ন করেছে।’

এর আগে ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে রিট করা হয়। শুনানির জন্য হাইকোর্ট আগামী মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন। রিটে ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে প্রার্থিতা অযোগ্য। এই রিটে ঢাবি’র পক্ষে আছেন আইনজীবী শিশির মনির।

এদিকে গতকাল ফরহাদ অভিযোগ করেন, ইতিবাচক কাজ না পেয়ে সকাল-বিকাল সমালোচনা করছে। ডাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী এসএম ফরহাদ একথা বলেন।

তিনি আদালতে দায়ের হওয়া রিটের বিষয়ে বলেন, বেশ কয়েকটি দল দীর্ঘদিন ধরে আমার ও ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমের ছবি-ভিডিও এডিট করে প্রচার করেছে। এখন কোর্টে গিয়েছে, এটাকে আমি ভালোভাবেই দেখি। তবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে পুরনো এজেন্ডা সামনে আনছে। আমরা একাত্তর আর চব্বিশকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছি। অথচ শিক্ষার্থীদের কাছে কাজের কোনো বার্তা না থাকায় তারা কেবল শিবিরবিরোধী সমালোচনায় লিপ্ত। আমরা এতে বিচলিত নই।

একই সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, তাদের নারী প্রার্থীদের উদ্দেশ্য করে সাইবার বুলিং ও চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে। আমাদের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে, গালাগালির কোনো সীমা নেই। কারা এসব করছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এর পেছনে আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি, তিনদিন পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। বিভিন্ন রঙের শিক্ষকরা এখানে প্রভাবিত হলে এবং তাদের ছাত্রসংগঠনকে সুবিধা দিলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে।

রোববার মধুর ক্যান্টিনে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ নামের বামপন্থি ছাত্র সংগঠনসমূহের প্যানেল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। জিএস প্রার্থী মেঘ মল্লার বসু ইশতেহার পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আমরা ‘সমতায়-প্রতিরোধে, নিরাপদ ক্যাম্পাস’ স্লোগান নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা।

ইশতেহারের ১৮ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি হলো: ডাকসুর কাঠামোর সংস্কার ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন ও গবেষণায় অগ্রাধিকার, আবাসন সংকট নিরসন ও নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, খাদ্য ও পুষ্টিমান নিশ্চিতকরণ, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবহন, লাইব্রেরি, কমনরুম ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ইত্যাদি।