
ফেরারি আসামিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান বাস্তবতার নিরিখে রাখা হয়েছে, বলেছেন নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ।যেকোনো আদালত কোনো ব্যক্তিকে ফেরারি আসামি ঘোষণা করলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না, জামানত ৫০ হাজার টাকা, ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে আসনের ভোটার সংখ্যার সমান নির্বাচনি ব্যয়ের বিধানসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কারের প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এরপর আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়, সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এসব প্রস্তাব পাঠালেও কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না, তা নির্ভর করবে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের ওপর।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে সরকারের সায় পেলে রাষ্ট্রপতি সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমবারের মতো ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণার বিধান আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কোনো আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে অযোগ্যতার বিধান রয়েছে বিদ্যমান আইনে।
আরপিওতে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “যে কোনো ফৌজদারি মামলায় ফেরারি আসামি হলে অযোগ্য হবেন। অপব্যবহারের আশংকা থেকে এটা করতে চাইনি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এটা করা হয়েছে। সামনে যদি অপব্যবহার হয়, তবে আবার এটা পর্যালোচনা করতে হবে।”
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনে করেছে এমন বিধানটি রাখা ভাল হবে। সামনে যদি এটির অপব্যবহার হয় তখন প্রয়োজনে আবার সংশোধন করা যাবে।
এই নির্বাচন কমিশনার জানান, এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে ইসি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকলেও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়নি।
ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে আসনের ভোটার সংখ্যার সমান ব্যয় এর সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনি ব্যয়ের সুযোগ ছিল প্রত্যেক প্রার্থীর। সে বিধান বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব থেকে বেশি ভোটার রয়েছে গাজীপুর-২ আসনে। এই আসনের ভোটার ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন।
অন্যদিকে, সবচেয়ে কম ভোটারের আসন হচ্ছে ঝালকাঠি-১ আসনে। এই আসনে ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ১২ জন।
এবার ভোটার প্রতি ১০ টাকা হারে ব্যয়ের সুযোগ রেখে প্রস্তাব দেওয়ায় গাজীপুরের এই আসনটিতে ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ প্রায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ থাকছে।
এছাড়া ঢাকা ১৯ আসনে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ লাখ ভোটারের জন্য ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীরা।
এ নির্বাচন কমিশনার জানান, অনিয়ম হলে রিটার্নিং অফিসার একটি বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন।
কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হবেন সর্বেসর্বা
ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কখন ভোট শুরু করবেন, আর কখন বন্ধ করবেন।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “আগে প্রিজাইডিং অফিসার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত ছিল। মাঝখানে এটা সংশোধন করে বিধান করা হয়েছিল যে ভোট শুরুর পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি দেখবেন, তারা রিপোর্ট দিলে প্রিজাইডিং অফিসার ভোট শুরু করতেন।
“আমরা এটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছি। এতে কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হবেন সর্বেসর্বা।”
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ কে কতক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে থাকবেন তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রিজাইডিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।