Image description

ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর থেকেই রাজধানীজুড়ে দেখা যাচ্ছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। এর মাঝেই আবার সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় অটোরিকশা নিয়ে পোস্ট করেছিলেন সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। তিনি লিখেছিলেন, “মেইন রাস্তায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চললে গাড়ির ট্যাক্স দেবো না।” এবার এই বিষয়টি জেনো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে। হচ্ছে একের পর এক পোস্ট। লাইক কমেন্ট শেয়ারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসব পোস্টগুলো।

 

হঠাৎ কেন ট্যাক্স দিতে চাচ্ছেন না গাড়ির মালিকরা? এর পিছনের কারণ খুঁজেত গিয়ে দেখা যায়। অটোরিকশা চালকদের ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ড।

 

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৪৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫০২ জন নিহত ও ১ হাজার ২৩২ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে দেখা যায় এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে অটোরিকশা চালকদের কারণে।

 

এখন প্রশ্ন হলো, আদৌ কি ট্যাক্স ছাড়া রাস্তায় চলতে পারবে কোন গাড়ি? এটি কখনোই সম্ভব নয়। কারণ, ট্যাক্সের পেপার ছাড়া রাস্তায় বের হলেতো ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা খেতেই হবে, পরিশেষে মামলা-জরিমানা তো থাকছেই। আর গাড়ি বর্তমানে আর ঢাকাবাসীর জন্য সৌখিনতা নয় বরং দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়তার প্রতীক। একজন গাড়ির মালিককে প্রতি বছর সিসি অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হয় সরকারকে।

 

আর একাধিক গাড়ির মালিককে তো অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার টাকা ট্যাক্স গুনতে হয় প্রতিবছর। যেখানে গাড়ির মালিকরা সরকারকে বিশাল পরিমাণ ট্যাক্স দিচ্ছেন বছর ঘুরে। সেখানে অটোরিকশার চালকরা, মালিকরা নষ্ট করছেন দেশের সম্পদ। অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে চার্জ করা হয় এসব অবৈধ লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।

 

সরেজমিনে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশার গ্যারেজগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের নেই কোন প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র, নেই কোন বিদ্যুতের মিটার। এরপরও দিনে ১৫০-২০০টি করে অটোরিকশা চার্জ করছেন তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধ লাইন নিয়ে এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কাজ পরিচালনা করে থাকেন গ্যারেজ মালিকরা।

 

আর অবৈধভাবে বিদ্যুৎ অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় সীমাহীন লোডশেডিং। এরপরও ঢাকাবাসীকে খুশি রাখতে বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখা হয় নিরবচ্ছিন্ন। আর সেই ধাক্কাটা গিয়ে পড়ে জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে। অনেক স্থানে কৃষকেরা বিদ্যুতের অভাবে ফসলে ঠিকভাবে সেচ দিতে পারেননা। প্রচণ্ড গরমে আর আলোর অভাবে পড়াশোনায়ও বিঘ্ন ঘটে শিক্ষার্থীদের। এ সকল কিছুর নেপথ্যে যে কারণ একটাই, তা হলো অবৈধ সব অটোরিকশা।

 

আর বর্তমানে রাজধানীতে যারা এসব অটোরিকশা চালাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা-কর্মী, তারা পালানোর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে এভাবে রিকশা চালাকের বেশে আত্মগোপনে রয়েছেন বলেই তথ্য গোপন সূত্রের। এই কথার পূর্ণতা জেনো মিলে যায়, বর্তমানে রাজধানীর অধিকাংশ রিকশা চালকের কর্মকাণ্ডে। তাদের অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ, হাসিনা পতনের পর আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় জনদুর্ভোগ তৈরি আর মব সৃষ্টিতে সামনে থেকে ইন্ধোন দেওয়া সব কিছুই জেনো নিষিদ্ধ খুনি ছাত্রলীগেরই বহিঃপ্রকাশ।

 

অথচ ২-৩ বছর আগেও রিকশা চালকদের আচরণ ছিলো নমনীয়। তাদের অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হতে হতো। আর বর্তমানে এসব অটোরিকশা চালকদের মুখের ভাষা শুনলে নিজের কাছে নিজেকেই লজ্জিত হতে হয়। মাঝেমধ্যেই অতিরিক্ত গতির ফলে প্রাইভেট গাড়ির মালিকদের গাড়িতে লাগিয়ে দিয়ে ক্ষতি করে বসে থাকছেন তারা। এরপরও নেই কোন অনুতপ্ততা। উল্টো আরও প্রাইভেট গাড়ির মালিকের সাথেই বাজে ব্যবহার করতেও দেখা যায় তাদের, এমন কিছু ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

 

অন্যদিকে এসব অটোরিকশা সুযোগ পেলেই উঠে যায় মেইন রোডে, ভিআইপি জোনে এমনকি ফ্লাইওভারকে ছাপিয়ে এক্সপ্রেসওয়েও বাদ যায়নি তাদের দৌরাত্ম্য থেকে। এদের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন শতশত দুর্ঘটনা ঘটছে, যার সব গণমাধ্যমে উঠে আসছে না। দেশের সংঘটিত বর্তমানে ৯০% দুর্ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার চালকরা। তারা প্রতিদিন গড়ে ৫ জন করে মানুষের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

 

বিষয়টি এখনি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিৎ দায়িত্বশীলদের। বর্তমানে ব্যাটারি চালিত ক্যান্সার রূপী এসব অটোরিকশার চালকদের এখনই প্রশ্নের মুখোমুখি করা উচিৎ, খতিয়ে দেখা দরকার তাদের পরিচয়ও। তা না হলে গাড়ির মালিকদের ট্যাক্স না দেওয়ার ঘোষণা বড় আলোচনার ইস্যু হিসেবেও ধরা দিতে পারে জাতির সামনে, সরকারের সামনে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো একটি দেশের প্রেক্ষাপটে কখনোই রাজধানী ঢাকার মত জায়গায় চলার অনুমতি দেওয়া উচিৎ নয় এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার, বরং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল কিংবা উপজেলা শহরে স্বল্প সংখ্যক অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে তাও নিয়ন্ত্রিত গতি সীমার মধ্যেই তাদের বাধ্য রেখে।