
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে জয়ের ৮০তম বর্ষপূর্তি উদযাপনে ঐতিহাসিক তিয়েনানমেন স্কোয়ারে চোখ ধাঁধানো সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছে চীন। সেখানে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের অত্যাধুনিক সব অস্ত্রের বহর প্রদর্শন করেছে দেশটি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) তিয়েনানমেন স্কয়ারে এ সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। এ সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে। খবর বিবিসির।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কযুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে চীনের এই প্যারেড নতুন বার্তা দিচ্ছে বিশ্বকে। চীনের এমন শক্তি প্রদর্শনের দিনে রীতিমতো ক্ষোভ ঝেড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, চীনের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কিম জং উন ও পুতিন।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে ৭০ মিনিটের সামরিক মহড়া ও শৈল্পিক কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হয় সর্বাধুনিক সব সামরিক প্রযুক্তি। আকাশে ড্রোন, হাইপারসনিক মিসাইল আর সড়কে ভারী ট্যাঙ্কের সমারোহে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি তুলে ধরেন শি জিনপিং।
এদিন প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয় ডিএফ-৬১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, জেএল-৩ সাবমেরিন-লঞ্চড ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং হাইপারসনিক অ্যান্টি-শিপ মিসাইল ওয়াইজে-২০। এছাড়া, ৯৯বি মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক, পিএইচএল-১৬ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার এবং নতুন প্রজন্মের লয়্যাল উইংম্যান ড্রোনও নজর কাড়ে সবার।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মিসাইল ও হাইপারসনিক অস্ত্রগুলো মূলত মার্কিন নৌবাহিনী ও তাইওয়ান প্রণালীতে ওয়াশিংটনের সামরিক উপস্থিতি ঠেকাতে ব্যবহার করবে চীন। বিশেষত, ক্যারিয়ার কিলার নামে পরিচিত ওয়াইজে-২০ মিসাইল মূলত তৈরিই করা হয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরীগুলোকে টার্গেট করে।
মহড়ার মঞ্চে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি সবসময় সরকার ও জনগণের নির্ভরযোগ্য বাহিনী। নিজের সেনাদেরকে বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বানও জানান তিনি।
শি বলেন, পিপলস লিবারেশন আর্মি সবসময়ই দল ও জনগণের অগাধ আস্থার প্রতীক। সব কর্মকর্তা ও সদস্যদের উচিত অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা, দ্রুত বিশ্বমানের সেনাবাহিনী গড়ে তোলা, জাতীয় ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করা এবং মহান চীনা জাতির পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে কৌশলগত সহায়তা প্রদান করা।
কুচকাওয়াজে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন। মূলত, এ ব্যাপারটিই জ্বালা ধরিয়ে দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বুকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কি জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অবদান মনে আছে?... শি ও চীনের জনগণের জন্য শুভেচ্ছা রইল।
একইসঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ এনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।