Image description
বিদ্যুতের বিল ♦ মিটার রিডারদের একটি সিন্ডিকেট অনিয়মে জড়িত ♦ বিল সংশোধন করতে গেলে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের দিনমজুর কাজী ছাওধন মিয়ার ঘরে একটি বাতি ও একটি ফ্যান। এই বাতি ও ফ্যান চালাতে প্রতি মাসে ছাওধনের বিদ্যুৎ বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আসে না। কিন্তু চলতি মাসে তার বিল এসেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫ টাকা। এর সঙ্গে বিলম্ব ফি ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫৯৫ টাকা। তার মোট ব্যবহৃত ইউনিট দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করা হলে ছাওধনকে জানানো হয় কম্পিউটারের ভুলের কারণে এমন হয়েছে। এ ব্যাপারে বিল প্রস্তুতকারীকে নোটিস করা হয়েছে।

তবে ছাওধনের মতো আলতাফ হোসেন এত সহজেই ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারসাজি থেকে রেহাই পাননি। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের আলতাফ হোসেনের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় গত ২৪ মে সেই গ্রামের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ও মিটার রিডিং সরেজমিন দেখে। এরপর বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের গরমিলের সত্যতা দুদক কর্মকর্তারা খুঁজে পান। অভিযোগকারী আলতাফ জানান, মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলের কোনো মিল নেই। প্রতি মাসেই এজন্য অতিরিক্ত বিলের ঘানি তার টানতে হয়। এ নিয়ে ভুঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। উল্টো মিটার রিডারদের ঘুষ দিয়ে বিল কমিয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করতে হয়।

ভূতুড়ে বৈদ্যুতিক বিলের নানা অনিয়মের অভিযোগ পুরোনো। পল্লী বিদ্যুতের অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, মিটার রিডিং না দেখেই করা হচ্ছে মনগড়া বিল। আর বাড়তি বিলের জন্য তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মিটার রিডার এ ধরনের অনিয়মে জড়িত বলে তাদের অভিযোগ। গ্রাহকরা এ ব্যাপারে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পান না। উল্টো বিল সংশোধন করতে গেলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। তারা জানান, সময়ের বিল সময়ে না করে মিটার রিডিং না দেখেই মনগড়া ও অতিরিক্ত ইউনিট বেশি লিখে বিল করছে কিছু মিটার রিডার।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা পরিচালন (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) পরিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. হালিমুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখনই এ ধরনের কোনো ভূতুড়ে বিলের খবর আমাদের কাছে আসে আমরা তা তদন্ত করি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ডিজিটের ভুলের কারণে সাধারণত এ ধরনের ভূতুড়ে বিল আসে। মিটার রিডিং নেওয়ার সময় কোনো কারণে একটি বা দুটি ডিজিট বেশি হয়ে গেলে এ ধরনের ভুল হয়। এক্ষেত্রে এ ধরনের ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রে আমরা মিটার দেখে তা ঠিক করে দেই। দুই-একটি স্থানে মিটার না দেখে মনগড়া বিল লিখে দেওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের কিছুটা গাফিলতি আছে। এখন যে মিটার লাগানো থাকে সেগুলো অনেক সময় ব্লিংক করে। এর ফলেও মিটার রিডারদের দেখার ভুলে এমন হতে পারে। সরকার চেষ্টা করছে প্রিপ্রেইড মিটারে যেতে। এক্ষেত্রে ঢাকার আশপাশে পবিস এলাকাগুলো চলতি বছরের মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর বিদ্যুতের বিলিং সিস্টেম প্রিপ্রেইড মিটারে গেলে দুর্নীতির আর কোনো সুযোগ থাকবে না।