
নতুন করে উগ্র মৌলবাদের উত্থানে শঙ্কা-উৎকণ্ঠায় দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই উগ্রবাদের নামে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে ব্যাপারে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অতিসম্প্রতি দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি এ নির্দেশনা দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, বাংলাদেশে কিছুতেই উগ্র মৌলবাদের উত্থান যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। একটি বিশেষ মহল ধর্মের নামে নানা রকমের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা ও তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের শতবছরের ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’র ঐতিহ্য বিনষ্টই তাদের মূল লক্ষ্য। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। এসব বিষয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে তিনি সর্বস্তরের জনগণকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশে নতুন করে উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, যা রুখে দেওয়া না গেলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে নতুন করে কথা উঠছে, ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশে একধরনের উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই উগ্রবাদকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। তাহলে বাংলাদেশের যে অস্তিত্ব আছে, সেই অস্তিত্ব রক্ষা পাবে না। সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সেই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জানা যায়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিভিন্ন ফ্ল্যাটফর্মে- শান্তিপূর্ণ ইসলাম ধর্মের নামে নানা ভ্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেওয়া হচ্ছে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন উদ্ধৃতি দিয়ে নিজেদের মতো মনগড়া অপব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাদিসের উদ্ধৃতি ও ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে উগ্রবাদের জন্ম দেওয়া হচ্ছে। এমনও প্রচার করা হচ্ছে যে একটি বিশেষ দলের প্রতীকে ভোট দিলে বেহেশত নিশ্চিত। আর সেই দলের নেতাদের ভোট না দিলে ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। মানুষের ধর্মীয় স্পর্শকাতর অনুভূতিতে সুকৌশলে আঘাত হানার মাধ্যমে ভয়ভীতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে করে সামাজিক শৃঙ্খলা যেমন ভঙ্গ হচ্ছে তেমনি সমাজের নানা স্তরে উগ্র মৌলবাদের জন্ম হচ্ছে। ধর্মীয় অজুহাতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ নানা স্থানে মব তৈরি করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত আজকে এর কুপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
রিকশাওয়ালা, চা-বিক্রেতা, হকার, শ্রমিক, বিশেষ করে সমাজের অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসলামের নামে নানা মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইসলামের নামে একটি মহল কোটি কোটি টাকা খরচ করে পরিকল্পিতভাবে ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইউটিউব বা ফেসবুকের মতো যোগাযোগমাধ্যমগুলো মোবাইল ফোনে ওপেন করার সঙ্গে সঙ্গেই এসব বিভ্রান্তিমূলক ইসলাম ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা ও তথ্যসংবলিত রিল কিংবা ভিডিওগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামনে এসে হাজির হচ্ছে। দিনের পর দিন একই ধরনের ভিডিও দেখতে দেখতে কিছুটা হলেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে অনেকের মনে। এভাবেই চেষ্টা করা হচ্ছে ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা কাজী সেলিম রেজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উগ্র মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আহবান জানিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন। এ দেশে একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আখেরে তারা কেউ সফল হতে পারবেন না। বরং বাংলাদেশের সমগ্র জনগণ এদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে। এ দেশের মানুষ কখনোই জঙ্গিবাদ কিংবা উগ্র মৌলবাদে বিশ্বাসও করে না, প্রশ্রয়ও দেবে না।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা আবুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোরআন-হাদিস-ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে যারা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা আসলে মুসলমানই নয়। এদের ইসলাম হলো ভোটের ইসলাম, এদের ইসলাম হলো মানুষকে ধোঁকা দিয়ে প্রতারণা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া।’
অন্যদিকে অপর একটি ইসলামি দলের শীর্ষনেতা বলেছেন, ‘তাঁর দলের প্রতীকে ভোট দিলে বিশ্বনবী রসুল পাক (সা.)-কে নাকি ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।’ ওই একই ব্যক্তি তাঁর অপর এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘এই যুগে কোরআন নাজিল হলে নাকি এতে তাঁর বাপ-দাদার নাম থাকত।’ কাজেই এঁদের সর্বস্তরের মুসলমান ভাইবোনদের পরিহার করতে হবে। এরা ইসলামের নামে ভন্ডামি আর প্রতারণা করে ক্ষমতায় যেতে চায়।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধর্মের নামে যারা ভন্ডামি শুরু করেছে এদের বাংলাদেশের আপামর জনগণ প্রতিহত করবে। প্রবিত্র কোরআন, হাদিস এবং ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিয়ে তথাকথিত যেসব ইসলামি রাজনৈতিক দল মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে এদের কাছ থেকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কারণ বিএনপি ইসলামি মুল্যবোধে বিশ্বাসী একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দ্বীন-ইসলামের প্রচার ও খেদমতের জন্যেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদিন এই জাতীয়তাবাদী ওলামা দল গঠন করেছিলেন। তিনি প্রথম ও একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি দেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছিলেন।