Image description
দেশি-প্রবাসী কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ভিউ ব্যবসা

‘আত্মঘাতী বাঙালী’ নামে বই লিখে বাংলাদেশ ও ভারতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী। কলকাতার এ লেখক বইয়ে কিছু শিক্ষিত বাঙালীর চরিত্র উন্মোচন করেছেন। বাঙালী নেতা-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী সমাজে অনেক আত্মঘাতী ব্যক্তি রয়েছেন ‘ব্যক্তি স্বার্থে রাষ্ট্রের সর্বনাশ’ করতে তাদের বিবেকে বাধে না। ’৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় লর্ড মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পিত স্যার সিল সিরিল র‌্যাডক্লিফের নেতৃত্বে ‘সীমান্ত নির্ধারণ’ কমিটিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চারজন করে সদস্য ছিলেন। ওই কমিটির সদস্য না হয়েও পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী আত্মঘাতী ভ‚মিকা রাখেন। তিনি সীমান্ত নির্ধারণ কমিটির সদস্যদের প্রভাবিত করে ঢাকার বর্তমান প্রান্থপথ এলাকার অর্ধশত বিঘা ও কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের পাশের কয়েক বিঘা জমি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে বিনিময়ে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার জগন্নাথ সোনাপুরে ত্রিপুরার শেষ স্বাধীন নবাব শমসের গাজীর প্রাসাদের অনতিদূরে ‘চম্পকনগর’ নামে একটি গ্রাম ভারতের হাতে তুলে দেন। প্রখ্যাত ওই রাজনীতিকের ব্যক্তি স্বার্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে কয়েক কিলোমিটারের গ্রামটি হারাতে হয়। ফেনীর সীমান্তের ওই এলাকায় মানুষের মুখে মুখে এ প্রচারণা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ফেব্রæয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃঢ় অবস্থান নেয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ার দেশ-বিদেশের কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর যেন মওকা পেয়ে গেছেন। নিজেদের চ্যানেলে ও ফেসবুকে ‘লাইক-ভিউ’ বাড়িয়ে সামান্য কিছু ডলার প্রাপ্তির জন্য দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টির প্রচারণা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় তখন কেউ নির্বাচন বানচাল করতে, কেউ নির্বাচন পেছাতে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির মতোই অপ্রীতিকর ও ভিত্তিহীন ইস্যু সৃষ্টি করছে। ওই গুপ্ত খবর নিয়ে নিজের চ্যানেলে ভিউ বাড়াতে ‘তিলকে তাল বানিয়ে’ প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ ইঙ্গ-মার্কিন নকশা এবং আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিকল্পিতভাবে এসব করছেন। এতে করে সাধারণ ক্রিয়েটরদের অনেকেই কবি শামসুর রাহমানের ‘কান নিয়েছে চিলে’ কবিতার মতোই কোনো কিছু না জেনে-বুঝে অপপ্রচার স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কিছু ব্যক্তির ‘বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ ‘অতিকথন’ ‘আগ বাড়িয়ে কথা বলা’ এবং ‘কাÐজ্ঞানহীন কথনের’ কারণেও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হয় এবং ইউটিউবাররা সেটাকে কেন্দ্র করে ‘গুপ্ত তথ্যের’ খবর প্রচার করে চ্যানেলে ভিউ বাড়ায়।

ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার পালানোর পর থেকেই আওয়ামী লীগের অলিগার্করা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ভার্চ্যুয়ালি অপপ্রচার শুরু করে। দেশের বেশিরভাগ তাঁবেদার গণমাধ্যম এবং দালাল সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী সে প্রচারণায় নিজেদের সক্রিয় করে। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশবিরোধী মিথ্যা প্রচারণার লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে হাজার হাজার নেটিজেনদের নিয়োগ দেয়া হয়। তারা একেক একেক ইস্যু সৃষ্টি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পক্ষের কিছু দেশি-প্রবাসী ইউটিউবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেরাই চ্যানেল খুলে তারা প্রচুর অর্থকড়ি কামাচ্ছেন। এরাও ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামানোর লক্ষ্যে দেশ ও গণতন্ত্রের সর্বনাশ করতে আওয়ামী লীগের অলিগার্কদের সুরে অপ্রয়োজানীয় প্রচারণা চালিয়ে ভিউ বাড়াচ্ছেন। তারা ভিড় বাড়াতে এমন সব ইনফর্মেটিভ টাইটেল, থাম্বনেল এবং ডিসক্রিপশন ভিডিওতে দিচ্ছেন যা দর্শকদের সহজেই আকৃষ্ট করছে। এতে দেশি-বিদেশী ওই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের একাউন্টে ডলার জমা হলেও দেশের ক্ষতি করছেন। তারা গণতন্ত্রের পথযাত্রায় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। কথাশিল্পী আহমদ ছফা বলেছিলেন, ‘বু্িদ্ধজীবীদের কথা শুনলে দেশ স্বাধীন হতো না/এখন যা বলছেন, শুনলে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে না’। বর্তমান দেশ-বিদেশের ভিউ বাড়ানো এসব কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবারের পরামর্শ শুনলে জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে না।

প্রধান উপদেষ্টা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টাইমফ্রেম ঘোষণা করেছেন। ফেব্রæয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী ভারত চায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আগামী সংসদে পুনর্বাসন করতে। এ টার্গেট বাস্তবায়নে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনের মতো রাজনৈতিক শক্তি এখন পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি করছে। ওই দাবির পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়ে ভিউ বাড়িয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের কিছু দেশি-প্রবাসী ইউটিউবার প্রতিযোগিতায় নামে। সুবিধা করতে না পেরে একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে প্রচারণা চালাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিকটক এবং অন্যান্য ভিডিও’র সার্চ র‌্যাংকিং বৃ্িদ্ধর ভিউ শিকারীদের সর্বশেষ সাবজেট হচ্ছে বিদেশি দূতাবাস থেকে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের ছবি নামানো। এমন সব জ্বলজ্বলা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে যা দেখে শুনে দর্শকরা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও, খবর ও বক্তব্য শুনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি দূতাবাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের কোনো ছবিই টানানো ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির চেষ্টায় এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন এমন কয়েকজন ইউটিউবার নির্বাচন ঠেকাতে ‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি’, ‘প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের ছবি নামানো’, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার’, বর্তমান ‘অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে আওয়ামী লীগের আমল ভাল ছিল’ প্রচারণা এমন ইনফর্মেটিভ টাইটেল, থাম্বনেল দিয়ে আকর্ষণীয় করে প্রচার করছেন যে, তা দেখতে-বুঝতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তারা প্রচার করছেন, উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান জেনেভায় দূতাবাসে প্রেসিডেন্টের ছবি টানানো দেখে ক্ষুব্ধ হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে বিশ্বের দেশে দেশে হাইকমিশন ও দূতাবাস থেকে প্রেসিডেন্টের ছবি নামাতে বলা হয়। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এমন কোনো ফোন করা হয়নি। ইউটিউবে ভিউ বাড়াতে প্রচার করা হয় ‘প্রেসিডেন্ট বিদেশ যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়া হয়নি। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রথম ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট বিদেশে গেলে তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রবাসী সরকার গঠন করবেন’ এমন প্রচারণা করা হয়। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কেউ কেউ সেনাপ্রধানকে পছন্দ করছেন না এমন ব্যক্তিদের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তায় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ভিউ বাড়াতে এমন প্রচার চালাচ্ছেন।

এ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ-উর রহমান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন স্বশস্ত্র বাহিনী প্রধান। তাকে রেখে সেনাপ্রধানকে সরানোর সুযোগ নেই। সেনাপ্রধান নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে বেশি দিন ব্যারাকের বাইরে রাখতে চাচ্ছেন না। নির্বাচনে পেছানোর খায়েশ যাদের তারা সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন। এ জন্য অনলাইন অ্যাক্টিভিটিসরা প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে পরে সেনাপ্রধানকে সরাতে চাইছেন। এ জন্যই প্রেসিডেন্টের ছবি নামানো হয়েছে এমন কুপ্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়া হাসিনার আত্মীয় হয়েও সেনাপ্রধান জুলাই অভ্যুত্থ্যানের সময় জনগণের ওপর গুলি ছুঁড়তে অস্বীকার করেন। ফলে সেনাপ্রধান একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে সংস্কারের দোহাই দিয়ে পিআর পদ্ধতির দাবিতে নির্বাচন পেছানোর পক্ষের শক্তি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন’।

ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা ‘সেনা শাসন’ আসছে এমন প্রচারণাও চালাচ্ছে। কেউ প্রচার করছেন, আরাকান আর্মির জন্য করিডোর এবং সেন্ট মার্টিন দেয়ার প্রতিশ্রæতি পাওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি য্ক্তুরাষ্ট্রের এতদিন সমর্থন ছিল। কিন্তু সেগুলো দিতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনের মতো দলকে পিআর একগুয়েমি করার পরামর্শ দেন। এমনকি মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর এনসিপির নেতারা ‘ফেব্রæয়ারিতে নির্বাচন হবে না’ এমন ঘোষণা দেন। অন্যদিকে উপদেষ্টা রেজওয়ানা হাসান ঘোষণা দিয়ে বলেন, কারো কথায় কিছু আসে যায় না; ঘোষিত সময় ফেব্রæয়ারিতেই নির্বাচন হবে’। ‘যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূস সরকারের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে’, ‘এনসিপি নির্বাচন হতে দেবে না’, ‘নির্বাচন ঠেকাতে সামনে অনেক খেলা আছে’ ইত্যাদি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চলছে ভিউ বাড়াতেই। হাসিনা রেজিমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষ্যে নানাভাবে প্রচারণা চালাতেন; তাদের অনেকের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিকটক, ইউটিউবে প্রচারণার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে ইংরেজি প্রবাদ ‘পোপ মোর দ্যান ক্যাথলিক’ (পাপ ক্যাথলিকদের চেয়েও বেশি)। বছরের পর বছর ধরে যারা আওয়ামী লীগ ও হাসিনার পতনের দাবিতে সোচ্চার ছিল তারা এখন আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগার!

গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলকালাম কাÐ ঘটানো হচ্ছে। গত ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক কর্মীর রিকশাওয়ালা সেজে ৩২ নম্বরে ফুল দেয়ার চেষ্টায় গ্রেফতার নিয়ে এমন প্রচারণা চালানো হয় যে মানুষকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা চলে- ওই ব্যক্তি আওয়ামী লীগ নয়, রিকশাওয়ালা। তার উপর জুলুম করা হয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পুলিশকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।

গত ৩১ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আগামী ৪-৫ দিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্রুশিয়াল সময়’। আর যায় কোথায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভিউ বাড়াতে নেটিজেনরা এমন আকর্ষণীয় থাম্বনেল এবং ডেসক্রিপশন দিয়ে ভিডিও করে এবং ধারাভাষ্য দিয়ে প্রচারণা চালান যে দর্শকরা তাতে আকৃষ্ট হন এবং শঙ্কিত হন যে দেশে বোধহয় বড় ধরণের কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মরত কর্মকর্তার এমন রহস্যময় কথাবার্তায় বিভ্রান্তি ছড়ায় যা সোশ্যাল মিডিয়ার ভিউ ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে প্রপাগান্ডা ছড়ায়। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের এমন রহস্যময় কথাবার্তা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাজেজা কি?

দেশের মানুষ প্রায় দেড় যুগ ধরে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কয়েকমাস ধু¤্রজাল সৃষ্টির চেষ্টার পর প্রধান উপদেষ্টা রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। এখন সবকিছুই নির্বাচনমুখী। মানুষ যেমন ভোট দেয়ার জন্য তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে; তেমনি নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন এমন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর তারা বিনিয়োগ করবেন। অর্থনীতির যাদুকর ড. ইউনূস পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার। তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট বানিয়ে ভিউ বাড়াতে দেশ বিরোধী তথা মাফিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে এমন প্রচারণা কেন?

এটা ঠিক বর্তমানে ইউটিউব আয় করার অন্যতম একটি প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ ইউটিউবে কনটেন্ট তৈরি করে মাসে হাজার হাজার ডলার আয় করছেন। ইউটিউবে এক হাজার ভিউ থেকে আয় হয় ০.৫০ থেকে পাঁচ মার্কিন ডলার পর্যন্ত, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৫ টাকা থেকে ৫৫০ টাকার মতো। ভিডিওর থাম্বনেল যতই আকর্ষণীয় হবে এবং মানুষের আগ্রহ বেড়ে ততই বেশি ভিউ পড়ে। এতে দর্শক বেড়ে যায় এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটরের আয় বাড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে সামান্য এই ব্যক্তিগত রোজগারের জন্য দেশের গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব হোক এমন প্রচারণা কেন? হামিদুল হক চৌধুরী ’৪৭ সালে দেশভাগের সময় নিজের সামান্য সুবিধা নিয়ে দেশের বড় এলাকা ভারতের মানচিত্রে তুলে দিয়ে বিতর্কিত হন। এতো বছর পরও মানুষ তার অপকাÐ মানুষ মনে রেখেছে। এখন গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার চূর্ণ করতে বিভ্রান্তি ছড়ানো বক্তব্যে ভিউ বাড়ালে বিদেশি মুদ্রা কিছু আয় হয়তো হবে; কিন্তু মানুষের কাছে নেতিবাচক চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। এটাও মনের রাখা উচিত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুখিয়ে থাকা মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।