Image description

ফাহমিদা তাহসিন কেয়া নামে এক গৃহবধূ মৃত্যুর ৬ দিনেও রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়নি পালিয়ে যাওয়া স্বামী সিফাত আলী। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেয়ার স্বজনরা। পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নিহত কেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এখনো আমার মেয়ের হত্যাকারীদের কেন গ্রেপ্তার দেখছি না। শুক্রবার রাতে কেয়ার মরদেহ নিয়ে মিরপুর মডেল থানা ঘেরাও করে সেখানে মানববন্ধন করেছি। পরে আমাদের থানা-পুলিশের সহায়তায় রাত দশটার দিকে আমাদের কাছে বাচ্চাদের নিয়ে আসি। শনিবার সকালে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায় কেয়ার মরদেহ দাফন করা হয়। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৯ আসামির কেউই ধরা পড়েনি। আমরা হতাশ। দুই এবং সাত নম্বর আসামি একই বাসায় স্বামী-স্ত্রী অবস্থান করছে। পুলিশ  তাদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি। একটি হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা চোখের সামনে ঘুরছে অথচ ধরছে না পুলিশ।

কেয়ার ফুপা সামসুদ্দোহা খান মানবজমিনকে বলেন, এটা অবশ্যই একটা প্ল্যান মার্ডার। আমাদের মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে। কেয়ার মোবাইল ফোন, বাচ্চাদের পাসপোর্ট, বাসার সব জিনিসপত্র-স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে সিফাতের বাড়ির লোক। ওরা যে বাসায় ছিল সেটি ভাড়া বাসা। নিজের বাড়িতে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলায় এখানে ভাড়া থাকতো। কেয়াকে দেখতে না পেয়ে বাচ্চাগুলো সবসময় মায়ের কথা বলে। মা মা করে সারাক্ষণ ডাকতে থাকে। ছোট বাচ্চাটি তো মা ছাড়া কিছুই বুঝে না। 

তিনি বলেন, সিফাতের বাবা লিয়াকত ভূঁইয়া দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে হংকং থাকেন। তিনি একটি মামলার আসামি হয়ে পলাতক। সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, এমনকি বিয়েও করেছেন। সিফাতের চার-পাঁচটি দেশের ভিসা একসঙ্গে সবসময় রেডি থাকে। এই ১২ বছরে বেশ কয়েকবার কেয়া তার উপরে চলা নির্যাতনের কথা জানিয়েছে পরিবারকে।

সিফাতের জীবনযাপন সম্পর্কে সামসুদ্দোহা খান বলেন, সিফাতের তেমন কোনো ইনকাম ছিল না। তার বাবার মার্কেট, বাড়ি, ফ্ল্যাট-সম্পত্তি ছিল। সেগুলো সে বিক্রি করতো। ইনকাম না থাকলেও সে এগুলো বিক্রি করে গাড়িও কিনেছিল তিন-চারটা। বিক্রি করতো, খাইতে চলতে পছন্দ করতো। সে খানিকটা উগ্র টাইপের ছিল। সিফাতের একটা গ্যাং ছিল। সে তাদের নিয়ে কয়েকটি গাড়ি-মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতো। কেয়া ভিকারুন নেছায় পড়তো। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়। খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল কেয়া। নাচ-গান, খেলা সবকিছুতে খুব ভালো ছিল। 

তিনি বলেন, কেয়ার স্বামী বেশি পড়াশোনা করেনি। ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রি করতে চাইলে কেয়া বাধা দিলে তখন ঝামেলা বেঁধে যেতো কেয়ার সঙ্গে। সিফাতের যখনই মন চাইতো তখন বিভিন্ন দেশে চলে যেতো। বিলাসী জীবনযাপন ও বিদেশে গিয়ে জুয়া খেলতো। আমাদের ধারণা- হয়তো সে দেশেও এমন জুয়ার সঙ্গে জড়িত থাকতো। শেষ তিন বছরে সে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ করেছে বাড়ি-ফ্ল্যাট বিক্রি করে।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমান মানবজমিনকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার নিহত কেয়ার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলাটিতে কেয়ার স্বামী সিফাত ও তাদের গাড়িচালকসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। 

বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রহস্যজনক মৃত্যু হয় ফাহমিদা তাহসিন কেয়ার। পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শামীম সরণির ৫৮৩ নম্বর অনামিকা কনকর্ডে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন কেয়া। ঘটনার দিন সিফাত রাত ২টার দিকে কেয়ার মা নাজমা বেগমকে ফোন দিয়ে বলে, ‘কেয়া অসুস্থ, দ্রুত তাদের বাসায় যেতে। এক পর্যায়ে সে আবার বলে, ‘আপনাদের মেয়ে আর নেই।’ পরে সিফাত আবার জানায়, ‘কেয়াকে বিআরবি হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’ সেখানে নিহতের পরিবার গিয়ে মৃত অবস্থায় পায় এবং হাসপাতালে সিফাতের বন্ধু ও ড্রাইভারকে পেলেও সিফাতকে পাইনি। সেদিন হাসপাতাল থেকে সিফাত পালিয়ে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার কেয়ার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে সিফাতসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।