
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নামে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মহিউদ্দিন রনি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিসহ হামলাকারীদের আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার সকালে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন করে। পরে চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা পৃথক সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্র জুবায়ের আল মাহমুদ বলেন, ‘শুরুতে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে এই আন্দোলনের নামে তারা আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ এমনকি আমাদের মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। রাস্তায় শিক্ষার্থীরা বেড় হলে তাদের গালিগালাজ করছে ও ধাওয়া করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতা আছি। তাই মহিউদ্দিন রনি ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফি এবং অন্যান্য উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তারসহ যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন,‘আজ সকাল ৮টা থেকে আমরা সকল শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করছি। যতদিন পর্যন্ত মহিউদ্দিন রনি ও কাফি এবং অন্যান্য উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ক্লাস বর্জন করব।’
আজ বেলা ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এ সময় পরিচালককে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়া হয়। কিন্তু গতকাল আবার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী আমাদের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের ওপর অতর্কিত হামলা করে।’
তিনি আরও বলেন,‘গতকাল হাসপাতালের স্টাফদের ওপর হামলা করা হয়। হাসপাতাল ভবনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় উসকানিদাতা এবং হামলাকারীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা গতকাল বিকেল ৩টা থেকে কর্মবিরতি যাই। এরপরও রোগীদের কথা চিন্তা করে ফের কর্মস্থলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু হামলাকারীরা আমাদের অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থাতে আমরা ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত এবং উসকানিদাতাদের আজ গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
পৃথক সংবাদ সম্মেলনে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন,‘গতকাল রবিবার মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নামে কিছু দুষ্কৃতকারী হাসপাতালের প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। ওই দিন আমাদের মেডিসিন ইউনিট-২ এর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলিপ রায়কে বেদম মারধর করে। চিকিৎসকের ওপর এমন নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ায় রোগীরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি আমাদের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মহিউদ্দিন রনি ও দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মহিউদ্দিন রনি ও দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা সর্বস্তরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাব। তবে শুধু রোগীদের কথা বিবেচনা করে আগামী ৪৮ ঘণ্টা আমরা হাসপাতালের সকল সেবা চালু রাখব। কিন্তু এই সময় এর মধ্যে যদি কোনো চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর ওপরে হামলা হয় অথবা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে ওই সময় থেকে আমরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাব।’
এদিকে, আজ সাড়ে ১২টায় হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের নামে চিকিৎসক এবং স্টাফদের ওপর হামলাকারী মহিউদ্দিন রনিসহ দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল মোনায়েম সাদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য সংস্কারের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু ওরা স্বাস্থ্য সংস্কারের নামে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের প্রতিপক্ষ মনে করে প্রতিদিনই হামলা চালাচ্ছে। আমরা সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এই দাবিতে আগামীকাল বেলা সাড়ে ১২টায় আমরা আবারও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করব। এরপরও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা একযোগে জরুরি সেবাসহ সকল সেবার ক্ষেত্রে কর্মবিরতিতে যাব।’
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর বলেন, ‘এ বিষয়ে ছাত্র, চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের আমি শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি রোগীরা যেনো কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে তাদের অনুরোধ করেছি।’