
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের আখিরা শাখা নদীতে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই শুরু হয়েছে ধস। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিম্নমানের কাজ, দুর্বল মনিটরিং এবং যথাযথ ডাম্পিং ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে ব্লক বসানোর কারণে এ ধসের ঘটনা ঘটেছে। তাদের দাবি, প্রকল্প শুরুর পর থেকেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন সবার মধ্যে।
চতরা এলাকার গফুর মিয়া বলেন, এ যাবত নদীর বা পাশের প্রায় ২শ মিটার ব্লক ২ বার ধসে পড়ছে এবং ঠিকাদারের লোকজন সাথে সাথেই মেরামত করছে।
একই এলাকার আশরাফুল ইসলাম জানান, জোড়াতালি দিয়ে করা হচ্ছে নদী সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে বর্ষা মৌসুমে। ব্লকের কাজে ওই নদীর বালু মাটি ব্যাবহার করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু স্থানের ব্লক ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
নদী তীরবর্তী আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র বলেন, নদীর সাইডের মাটি ঠিকভাবে শক্ত করে নেয়নি। পানির মধ্যে ব্লক বসিয়ে কাজ করছে ঠিকাদার। এজন্য আমার ঘরের সামনে ব্লক ফাটল ধরেছে।
এ কাজটি রংপুরের হাসিবুর রহমান নামে এক ঠিকাদার পেলেও সেটি বাস্তবায়ন করছে রংপুরের ভরদ প্রসাদ নামে এক ঠিকাদার। ওই ঠিকাদারের ম্যানেজার শ্যামল বাবু সংবাদিককে বলেন, আমরা কাজটি দেরি করে বর্ষা মৌসুমে শুরু করেছি। যেগুলো সমস্যা হয়েছে সেগুলো আবার ঠিক করে দিতে হবে। কি লেখার আছে লিখতে থাকেন।
ঠিকাদার ভরদ প্রসাদ বলেন, ‘কাজে কিছুটা তারাতারি করতে গিয়ে ঠিকভাবে ডাম্পিং হয়নি। এছাড়াও কিছুকিছু জায়গায় পাড়ের মাটি খুব কাদাযুক্ত থাকায় ডাম্পিং কাজে লাগেনি। এ কারণে ৩০০ মিটার যায়গা ধসে যাচ্ছে। আমরা এখনো সব বিল পাইনি মেয়াদ থাকা অবস্থায় কাজের সমস্যা হলে তা আমাকে মেরামত করে দিতে হবে। তা না হলে আমি কাজের সমুদয় বিল পাব না।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সাথে কথা হলে তিনি জানান, ওখানকার কাজ দেবে গেছে এজন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার ঠিক করে দেবে। এক বছর থাকে ঠিকাদারের ডিফেক্ট লাইবেলিটিজ পিরিয়ড। এরমধ্যে কোন সমস্যা হলে ঠিকাদার তার খরচে ঠিক করে দেবে।
পাউবোর রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আখিরা শাখা নদী রক্ষায় চতরা ইউনিয়নের চতরা হাট এলাকায় ৮০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ পায় হাসিবুল হাসান নামে এক ঠিকাদার। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ কাজ শুরু এবং ওই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ স্থানীয়রা বলছেন, কাজ গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে। কাজ দেরিতে শুরু হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রবিউল ইসলাম আরোও বলেন, আসলে ওখানকার খালটি লিজ দেওয়া ছিল মৎস্য অফিস থেকে সেখান থেকে লিজ ক্যান্সেল হয় এপ্রিলে। এর পর কাজটি শুরু করতে দেরি হয়ে যায়। তবে এটি এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় ‘রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার নদীর তীর সংরক্ষণ, ছোটনদী, খাল-বিল পুনঃখনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন শিরোনামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে আখিরার শাখা নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজটি শুরু হয়।