
ফাহমিদা তাহসিন কেয়া। ঘর বেঁধেছিলেন সিফাত আলীর সঙ্গে। এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে আসে একে একে চার সন্তান। ছোট্ট সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন পঁচিশ বছর বয়সী এই মা। পরম মমতায় আগলে রাখতেন তাদের। তবে সেই ভালোবাসা-মমতা বেশিদিন টেকেনি সন্তানদের ভাগ্যে। চিরদিনের জন্য মাকে হারিয়েছে তারা। আর কখনো ফিরে পাবে না তাদের মাকে। অবুঝ এই শিশুরা এখনো বুঝতে পারেনি তাদের মা আর নেই। কেয়ার সবচেয়ে ছোট দেড় বছরের শিশুটি পাচ্ছে না মায়ের কোল। বাকি সন্তানরা কাঁদছে আর মাকে খুঁজছে।
বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রহস্যজনক মৃত্যু হয় কেয়ার। পশ্চিম শেওড়াপাড়ার শামীম সরণির একটি বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী সিফাত আলী (৩০) স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর কৌশলে ফোন করে স্বজনদের জানিয়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনার পর থেকে কেয়ার স্বামী সিফাত পলাতক। এ ঘটনায় কেয়ার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে কেয়ার স্বামী সিফাতসহ নয় জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
কেয়ার মা নাজমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা করেছি। আমার নাতি-নাতনিরা তার ফুফুর কাছে আছে। ঘটনার দিন রাতেই তারা ওদের নিয়ে যায়। কেয়ার বড় সন্তানের বয়স ১০ বছর, মেজ সন্তানের ৮ বছর, তৃতীয় সন্তানের বয়স ৬ বছর এবং সব ছোট সন্তানের বয়স দেড় বছর। আমার অবুঝ নাতি-নাতনিরা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কখনো কাঁদছে আবার মাকে খুঁজছে। আমাদের কাছেও দিচ্ছে না বাচ্চাগুলোকে। কীভাবে ওরা সহ্য করবে মায়ের এই শূন্যতা। ছোট বাচ্চাটি মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না।
নিহত কেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, সিফাতের কি ফুটফুটে এই সন্তানদের জন্য একটু মায়া হলো না। আমার মেয়েটাকে শেষ করে দিলো, বাঁচতে দিলো না। ছোট বাচ্চাটি মায়ের কোল ছাড়া থাকে না। তিনি বলেন, সিফাত খুবই বদমেজাজি ছিল। সন্তানদের সামনেই কেয়ার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো, মারধর করতো। সে নিজে কিছু করে না। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছিল। তার দাবি, এরই বলি হয়েছে কেয়া। সম্প্রতি মারধর করার পর আমার মেয়ে জানায়, ‘সে আর সংসার করতে চায় না, বাবার বাড়ি ফিরে আসতে চায়।’ কিন্তু আমরা তাকে বোঝাই, এখন সংসার ভাঙা ঠিক হবে না। আমি সিফাতকেও বলেছিলাম যেন সে আর আমার মেয়েকে নির্যাতন না করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আমার মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং এটাকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে। রফিকুল বলেন, কেয়ার চার সন্তান। এক মেয়ে ও তিন ছেলে। বড় মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি আর বড় ছেলে আদমজীতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আমার ছোট ছোট চার নাতি-নাতনির এখন কী হবে? আমাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়।
ঘটনার ওই রাতের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ওর স্বামী রাত ২টার দিকে আমার স্ত্রী নাজমা বেগমকে ফোন দিয়ে বলে যে, কেয়া অসুস্থ, দ্রুত তাদের বাসায় যেতে। এক পর্যায়ে সে আবার বলে, ‘আপনাদের মেয়ে আর নেই।’ পরে সিফাত আমাদের জানায়, ‘কেয়াকে বিআরবি হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’ চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, পরে আমরা গিয়ে হাসপাতালে সিফাতের বন্ধু ও ড্রাইভারকে পেলেও সিফাতকে পাইনি। পরে জানতে পারি, সিফাত তার বোন ও দুলাভাইসহ পালিয়ে গেছে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ রোমান বলেন, নিহত কেয়ার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলাটিতে কেয়ার স্বামী সিফাত ও তাদের গাড়িচালকসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।