Image description

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( রাকসু ) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন । কোনো কোনো সংগঠন একক ও কেউ কেউ জোট গড়ে ভোটে লড়ার পরিকল্পনা করছে । বড় সংগঠনগুলোর মধ্যে শাখা ছাত্রশিবির জোটবদ্ধ প্যানেলের পাশাপাশি একক প্যানেলের কথাও ভাবছে । এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন , ছাত্র অধিকার পরিষদ , ইসলামী ছাত্র আন্দোলন , বাম সংগঠনগুলোর জোট ‘ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ’ নতুন আত্মপ্রকাশ করা ইউএসডিএফ , রাবি রেনেসাঁ , ব্যাকবেঞ্চার , বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল হতে পারে বলে জানা গেছে ।

ছাত্রদল বলছে , দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাবে না তারা । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ( রাবি ) প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ সালে । সে সময় এই সংসদের নাম ছিল ‘ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ' । ১৯৬২ সালে ‘ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ' নামে যাত্রা শুরু করে । এরপর ১৬ বার আয়োজন করা হয়েছে রাকসুর নির্বাচন । সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে ।

৩১ জুলাই ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাকসুর ভোট হবে । রাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন , “ আমরা একক প্যানেলের কথাই ভাবছি । তবে পরিস্থিতি বুঝে জোট করে প্যানেলে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছাত্রশিবিরের আছে । কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি । ' বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন , নির্বাচন কমিশনে এমন অনেকে রয়েছেন , যাঁরা অতীতে বিভিন্ন রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন ।

কোষাধ্যক্ষের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে সাবেক শিবির নেতাকে বসানো হয়েছে । অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করতে পারেনি । তিনি আরও বলেন , ‘ শিবির কমিশনকে জিম্মি করে রাকসু তফসিল আদায় করে নিয়েছে । নির্বাচন কমিশন ছাত্রদলসহ বাংলাদেশপন্থী কোনো সংগঠনের সঙ্গেই আলোচনা করেনি । তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচনে যাব না ; প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলব । '

এদিকে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অন্যতম সংগঠক এবং ছাত্র ইউনিয়নের ( একাংশ ) সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন , “ বামমনা ছাত্রসংগঠনগুলো নিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট প্যানেল ঘোষণা করবে । পাশাপাশি আমরা কয়েকটি ছাত্রসংগঠন , আদিবাসী সংগঠন , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলছি । ইতিমধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । আমাদের বিশ্বাস , আমরা একটি বৃহত্তর জোটের দিকে এগোচ্ছি । ৭-৮টি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রথমে আন্দোলনকেন্দ্রিক জোট হিসেবে শুরু হয়ে পরে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোটে রূপ নিতে পারে । ”

সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন , ‘ যারা ( জুলাই ) আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল , তাদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জোট করে প্যানেল ঘোষণার পরিকল্পনা করছি । আর যারা হলে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক , তাদের নিয়ে হল প্যানেল গুছানোর প্রক্রিয়া চলছে । আমাদের চেষ্টা আছে এ সপ্তাহেই প্যানেল ঘোষণা করার । কিন্তু সম্ভব না হলে আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে । '

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া । কেউ মনে করছেন রাকসু হলে সমস্যার সমাধানে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে , আবার কেউ শঙ্কা করছেন নতুন করে অস্থিরতা ও সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে । নির্বাচনে অংশ নেবেন না এমন শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনিশ্চয়তা রয়েছে । কেউ মনে করছেন রাকসুর মাধ্যমে রাজনীতির নামে দখলবাজি ও সহিংসতা ফিরে আসতে পারে , যা শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করবে ।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেলি মুত্তাকি বলেন, ‘ ছাত্রদের নেতৃত্ব থাকা দরকার , কিন্তু সেটা যদি দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায় , তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হবে না । আমরা কোনো সংঘাত চাই না , শুধু প্ৰতিনিধিত্ব চাই । ” ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন, 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ( প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমান ক্ষেত্ৰ ) নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ; বরং শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে । প্রশাসন বরাবরই একটি গোষ্ঠীকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে , যা রাকসু নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে বলে আমরা মনে করি । '

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাওয়া সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন , যদিও রাকসুর মেয়াদ মাত্র এক বছর , তবুও এটি সচল রাখা গেলে এবং প্রতিবছর নিয়মিত নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে । তিনি আরও বলেন , কিছু রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে , দাবি মানা না হলে যেকোনো উপায়ে নির্বাচন ঠেকাবে । অতীত অভিজ্ঞতা বলে , ক্ষমতাশালী মহল মাঝেমধ্যে এ ধরনের নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করে । তাই এসব

প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের ঐক্য জরুরি । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ - উপাচার্য ফরিদ খান বলেন , রাকসু বৰ্তমান শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশের জায়গা । কেউ যৌক্তিক দাবি জানালে তা বিবেচনা করা হবে , তবে নিয়মবহির্ভূত দাবি মানা হবে না । প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন , “ তফসিল অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি চলছে । নির্ধারিত সময়েই রাকসুর ভোট হবে । ” শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন প্রত্যাহার রাকসু নির্বাচনে তিন দফা দাবিতে চলমান আমরণ গণ - অনশন প্রত্যাহার করেছেন প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আশ্বাসে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নেন । আগামী রোববার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন তাঁরা । ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ বলেন , ‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রধান নির্বাচন কমিশন এসে বলেছেন তাঁরা পুরোনো ধারা অনুযায়ী হলে ভোটকেন্দ্র ঘোষণা করেছেন । কিন্তু এখন যেহেতু দাবি উঠেছে , তাঁরা সে বিষয়ে বসে রোববার সিদ্ধান্ত জানাবেন । আমরা তাঁদের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছি । যদি রোববার তাঁরা সিদ্ধান্ত , অর্থাৎ ভোটকেন্দ্র যদি একাডেমিক ভবনে ঘোষণা করা না হয় তাহলে আমরা পুনরায় অনশনে যাব ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন , ‘ আমরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম । প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং রাকসু কোষাধ্যক্ষ স্যার তাঁদের বোঝানোর পর তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করেছেন ।