
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অস্বচ্ছতা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ অতীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাছিু আয়, মূল্যস্ফীতি, জনসংখ্যা, দারিদ্র্য পরিস্থিতিসহ নানা আর্থসামাজিক তথ্য কারসাজির অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পরিসংখ্যানের গ্রহণযোগ্যতা, সত্যতা, মান ও সঠিকতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিবিএস-এর অস্বচ্ছতা দূর করে স্বচ্ছ করা হচ্ছে। এতে পরিসংখ্যান তৈরিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অনেকটাই কমে আসবে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত নিজ দপ্তরে যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার-হামিদ-উজ-জামান।
যুগান্তর : পরিসংখ্যানের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আপনি কোন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই দুটি বিধিমালা জারি করেছি। একটি হলো-যে কোনো তথ্য প্রকাশের জন্য উপদেষ্টার কাছে এসে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সংশ্লিষ্টরা সরাসরি মাঠ থেকে যা পাবেন, তাই প্রকাশ করবেন। অন্যটি হলো-পরিসংখ্যান প্রণয়ন, প্রকাশ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত। এ দুটি বিধিমালা সম্পর্কে অবহিত করতে আমি উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করব। পাশাপাশি পরিসংখ্যান আইন সংশোধনের সময় এই বিধিগুলো যুক্ত করা হবে। এতে পরিসংখ্যান তৈরিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমবে বলে আশা করছি।
যুগান্তর : স্বচ্ছতা রক্ষায় নতুন আরও কী উদ্যোগ আছে?
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : শিগ্গিরই আরও দুটি নতুন বিধিমালা জারির প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। একটি হলো-গবেষক বা সাংবাদিকসহ যারা পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে তথ্য নেন, তাদের ফি কমিয়ে আনা হবে। সেই সঙ্গে বিবিএস-এ বসেই গবেষকরা যাতে বড় স্ক্রিনে প্রয়োজনীয় ডেটা নিয়ে কাজ করতে পারেন, সেজন্য বসার ব্যবস্থা থাকবে। তবে এক্ষেত্রে যাদের তথ্য ব্যবহার করা হবে, তাদের বিষয়ে গোপন রাখতে হবে। এজন্য গোপনীয়তার নীতিসহ বিভিন্ন নিয়ম মেনেই কাজ করতে হবে গবেষকদের। এছাড়া জিডিপি কীভাবে মাপা হয় এবং প্রবৃদ্ধি কীভাবে হিসাব করা হয়, কোন কোন উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়-এরকম নানা বিষয় সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কোনো গোপনীয়তা থাকবে না। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কমে আসবে। সবাই পরিষ্কার থাকবে। সবাই দেখতে পারবেন। যার দরকার তিনি বিস্তারিত অ্যানালাইসিস করবেন। এককথায়-পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বচ্ছ করা হবে।
যুগান্তর : স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে বলুন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : এ নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আছে। আমরা কাজ করছি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছে একটি টাস্কফোর্স। এ মাসের শেষেই তারা প্রতিবেদন দেবে। সেখানে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কীভাবে আন্তর্জাতিক মানের করা যায় এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা যায়-সেসব বিষয়ে সুপারিশ থাকবে। স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের বিষয়টিও সেখানে থাকতে পারে। এটি করা কতটা কার্যকর হবে, কিংবা অন্যকিছু করা যায় কি না-এরকম নানা বিষয় তারা দেখছে। সেখানে অনেক বিশেষজ্ঞ লোকজন আছেন। তারা সুপারিশ দেওয়ার পরই বলা যাবে কী থাকছে সেখানে। তবে আমরা এমন কিছু করব যাতে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত হয়।
যুগান্তর : সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী যদি ক্যাডার না থাকে, তাহলে যারা কর্মরত আছেন তাদের বিষয়ে কী ভাবছেন?
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বাধীন কমিশন করলেও সেটি দক্ষতার সঙ্গে স্বাধীন করা দরকার। এক্ষেত্রে যদি ক্যাডার বিলুপ্ত হয়, তাহলে যারা কর্মরত তাদের অন্য ক্যাডারে একীভূত করা হতে পারে। তবে আমার মতে, যে কোনো বিশেষায়িত ক্যাডারে একীভূত করা হলেও তাদের একটা চিহ্ন থাকা উচিত। পরে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বা পদায়নের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল জায়গাগুলোয় যাতে দেওয়া যায়। এটা জোর করে নয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই দেওয়া দরকার। আমি নতুন একটি প্রস্তাব তৈরি করছি। সেখানে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হলেও যাতে তাদের একটি করে চিহ্ন দিয়ে দেওয়া যায়, তাদের দক্ষতাকে টেকনিক্যাল কাজে লাগানোর জন্য। এটি অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
যুগান্তর : বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কি নেওয়া হচ্ছে?
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা আগে অনেক স্বাধীন ছিল। কিন্তু এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এমনটা হলে তো হলো না। তবে আমরা বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান সংস্থার স্বাধীনতার স্তর এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে দেখছি।