
কুমিল্লায় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলামের কলিজা ছিঁড়ে ফেলার হুমকি ও নাঙ্গলকোটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দলীয় সম্মেলন করার অভিযোগে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল গফুর ভূঁইয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে দলটি।
শুক্রবার কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ দেওয়া হয়। আগামী তিনদিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশের অনুলিপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ককে প্রদান করা হয়।
অভিযুক্ত গফুর ভূঁইয়া ২০০১ সালে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য পদে আছেন।
নোটিশে বলা হয়, অতি সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লা ও জেলা প্রশাসক কুমিল্লাকে নিয়ে আপনার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া গত ১১ ও ১২ আগস্ট নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত বিষয়ে আপনাকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারী নিকট জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড়ভাই মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন এবং ইসরাত সুলতানা সুমীর নাম প্রস্তাব করা হয়। পরে বোর্ড থেকে তাদের তিনজনের মধ্যে মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে সভাপতি করা হয়।
এতেই দেখা দেয় বিপত্তি। নিজের নাম না থাকার খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে গালাগাল ও নানা হুমকি দেন গফুর ভূঁইয়া। এ সময় মেজাজ হারিয়ে গফুর ভূঁইয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাকে এ চেয়ারে কে বসাইছে, তার কতো বড় কলিজা? তার কলিজা খুলব, আপনার কলিজাও খুলব। আমি অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস, আপনারে আমি দেখে নেব।’ পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনের স্থলে গফুর ভূঁইয়াকে সভাপতি করার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, নাঙ্গলকোটের একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্প্রতি আব্দুল গফুরের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। আশা করি দলের নীতি নির্ধারকরা এসব বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া বলেন, বিএনপি ইতিবাচক ধারায় বিশ্বাসী। জনসাধারণ পছন্দ করে না এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশিত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এতে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রসঙ্গে আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, নোটিশ পেয়েছি সময়মতো জবাব দিব।