
নিত্যপণ্যের দাম পাইকারি বাজারে কিছুটা কমলেও বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। গত কয়েকদিনে পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমলেও এর প্রভাব নেই খুচরা বিক্রিতে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারিতে সব ধরনের সবজির দাম নিম্নমুখী হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে বেশি বেড়েছে দেশি পেঁয়াজ ও ডিমের দাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজার, কেরানীগঞ্জ বউবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরে বাজার দরের এমন চিত্র দেখা যায়।
তেজগাঁও এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির রাসেল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমিয়েছে কোম্পানিগুলো। আমরাও সে হারে কিছু কমেই বিক্রি করছি। আমদানি করা চাল বাজারে ঢুকলে দাম আরো কিছুটা কমতে পারে।
একই এলাকার খুচরা বিক্রেতা ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম কমেনি। চাঁদপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমদানি বাড়িয়েও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য সরকারের উচিত বেশি আমদানির পাশাপাশি পাইকারি পর্যায়ে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সিন্ডিকেট ও মজুতদারির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে, যাতে করে বাজারে স্বস্তি ফিরে।
সবজির বাজারে স্বস্তি নেই। মাসখানেক আগেও যেসব সবজি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। মুরগি, ডিম, মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে চালের দাম হঠাৎ কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছিল তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। এরপর হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলু ও পেঁপে ছাড়া প্রায় সব সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। করলা ৮০-১০০, বেগুন ১০০ থেকে ১২০, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০, গাজর ১৬০, দেশি শসা ৮০-১০০ ও হাইব্রিড ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বরবটি ১০০, পটোল, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৭০-৮০, কচুরলতি ৮০, কচুরমুখী ৬০-৮০, লাউ ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমলেও ফের বেড়ে ১৮০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে রাজধানীর অলিগলির সবজির দোকানগুলোয় প্রায় সবজি ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মানভেদে পেঁয়াজ ৮০-৯৫ টাকা, যা সপ্তাহ তিনেক আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। পাড়া-মহল্লার দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়। তবে এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি কমেছে আলুর দাম; কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।
সম্প্রতি সরবরাহ কমে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। সহসাই দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখছেন না বলে জানান বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ী বিক্রেতা আব্দুল কাদের আমার দেশকে বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে নেই। দেশীয় পেঁয়াজের মজুতও কমে আসায় বাজারে সরবরাহ কমে দাম বাড়ছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগ পর্যন্ত দাম বাড়তির দিকেই থাকতে পারে।
দুই সপ্তাহ ধরে ডিমের বাজারেও অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ছিল ১২০-১৩০ টাকা, এখন বাজারে ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৬-১৬০ টাকা ডজন। এছাড়া হাঁসের ডিম ডজন ২২০, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা। তবে গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতিটি বাদামি ডিম ১১ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরায় ডজনে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০-১৮০, সোনালি মুরগি ৩০০-৩৩০, সোনালি কক ৩৭০ ও দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কোরবানি ঈদের পর থেকে চালের দাম বাড়তি। বাজারে মিনিকেট ৮৫-৯২, নাজিরশাইল ৮৪-৯০, স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে রুই ৩৫০-৪০০, কাতলা ৪০০, পাঙাশ ২০০, চিংড়ি ৮০০, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০, মাঝারি সাইজের কই ২৮০-৩০০, দেশি শিং ৭০০-৭৫০, বড় সাইজের পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।
ফলের দামও চড়া। বিদেশি ফলগুলোর দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আপেল, মালটা, আঙুর, আনারস, পেয়ারার মতো ফলের দাম গত কয়েক সপ্তাহে বেশ বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের ফলের দাম অনেক বেড়েছে। এই সময়ে আঙুর, আপেল, মাল্টার কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।