
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে ডাকা সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় জড়ো হয়েছেন হাজারো শিক্ষক। আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ সমাবেশ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রেসক্লাব এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশে সড়কগুলোতেও অবস্থান নেওয়া শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রেসক্লাব এলাকা ইতোমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারাও রয়েছেন। পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহ এর সামনে ও শিক্ষা ভবন এলাকায়ও অনেকে অবস্থান নিয়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতিও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এদিকে বরিশাল থেকে সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসা শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে বরিশাল লঞ্চঘাটে এ ঘটনা। তাদের অভিযোগ, পাবারার-১২ লঞ্চের ২য় ও তৃতীয় তলায় তারা ভাড়া নিয়ে ঢাকায় আসছেন। এই দুটি তলায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে রাখলে ডিবি পুুলিশ পরিচয়ে একদল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক এসে তা খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তাদের সঙ্গে শিক্ষকদের হাতাহাতি ও তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটেছে।
লঞ্চে থাকা বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম বরিশাল বিভাগের সাধারণ মো. শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সরকারি বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ট্যাগে দিয়ে তাদের ব্যানার-ফেস্টুন খুলে নেওয়া চেষ্টা করা হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে হাতাহাতি ও তর্কাতর্কি হয়। পরে রাত ৯টার ১০ মিনিটের দিকে লঞ্চটি ছেড়ে দেয়। বর্তমানে তারা ওই লঞ্চে আছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। তাছাড়া ঢাকায় আমাদের সমাবেশের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এতে যোগ দিতে বরিশাল থেকে ১২-১৫টি শিক্ষক সংগঠন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক যোগ দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
ঘটনার সময় নিজ আইডি থেকে লাইভে যান মো. শহীদুল ইসলাম। সেখানে লঞ্চঘাটে শিক্ষকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। লাইভের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, বরিশালের লঞ্চে উঠে বরিশালের ডিবি পুলিশরা শিক্ষকদের মহাসমাবেশের ব্যানার কেড়ে নেয় এবং শিক্ষক আন্দোলনে যাওয়া শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়, এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ঘটনাটি ঘটে বরিশাল মহানগরের কতোয়ালী থানার ভেতরে। আর ডিবি পুলিশ বরিশাল পশ্চিমের অর্ন্তভুক্ত। সেখানকার ডিবির ডিসি (উপ-পুলিশ কমিশনার) ও এডিসি (অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার) এর অফিশিয়াল নাম্বার কল দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ ঘটনায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২০ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের জন্য ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়। সে সময় সরকার শিক্ষা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতিও দেয়, কিন্তু পরবর্তীকালে তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার পতনের পর অন্তবর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয় এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি ও পরবর্তী বাজেটে বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধিসহ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা কার্যকরের ঘোষণা দেন তিনি।
শিক্ষা উপদেষ্টার সুস্পস্ট ঘোষণা সত্ত্বেও ২০২৫-২৬ অর্থ বছর শুরু হলেও সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, শতভাগ উৎসব ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতার প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এ অবস্থায় দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। ১৩ আগস্ট সরকারের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হবে সমাবেশ থেকে।