Image description
♦ ট্রিলিয়ন ডলার মার্কেটে মিলিয়ন ডলারে আটকা বাংলাদেশ ♦ নীতির ভুলে রপ্তানি বাড়ছে না হালাল পণ্য

ইউরোপ-আমেরিকার পর বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারত মধ্যপ্রাচ্য; তার বদলে উল্টো মুসলিমপ্রধান এই অঞ্চলটি হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব এবং সরকারি নীতির ভুলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের চেয়ে কমে গেছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ৯৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের তুলনায় রপ্তানি কমেছে এমন দেশের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, লেবানন, কুয়েত, কাতার, ইরান, ইরাক, জর্দান ও সিরিয়া।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক; কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীরা যে ধরনের পোশাক ব্যবহার করে সেগুলো বাংলাদেশ তৈরি করে না। ওই অঞ্চলের রপ্তানি আয় মূলত শাকসবজি খাদ্যজাতীয় পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া এই শাকসবজিও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রবাসীদের ভোগের জন্য রপ্তানি হয়ে থাকে। ফলে প্রকৃত অর্থে মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীদের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য বাংলাদেশ থেকে খুব একটা রপ্তানি হয় না। আমরা যদি হালাল পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি, তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রপ্তানি আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।’

ট্রিলিয়ন ডলার মার্কেটে মিলিয়ন ডলারে আটকা বাংলাদেশ : বিশ্বে প্রতিনিয়ত হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর হালাল পণ্যের বাজার বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাকের বাজার ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের। অথচ হালাল পণ্যের বাজার ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের, যা তৈরি পোশাকের দ্বিগুণেরও বেশি। সম্ভাবনাময় এই ট্রিলিয়ন ডলার হালাল পণ্যের মার্কেটে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বছরে মাত্র ৮৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নীতির অভাবে ট্রিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনাময় মার্কেটে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বিসিআইর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি করছে বছরে মাত্র ৮৪৩ মিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই কৃষিভিত্তিক পণ্য। আমাদের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে। আমাদের সেটা কাজে লাগানোর জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন আর হালাল পণ্য খাদ্যপণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের নিত্যব্যবহার্য সব পণ্যই হালাল হতে পারে। যেমন- পোশাক, কলম, চশমা ইত্যাদি।’ মুসলিমপ্রধান দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও হালাল পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য, প্রসাধনসামগ্রী প্রভৃতিকে ‘হালাল’ পণ্য বা সেবা বলা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এ ধরনের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হালাল সার্টিফিকেশন বা সনদ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন বা সনদের অভাবে রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পণ্যের ক্ষেত্রে এ সনদ দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০১৭ সালে একটি হালাল ল্যাব উদ্বোধন করলেও যন্ত্রপাতির অভাবে সেটি এখনো সচল হয়নি। যে কারণে এর আগে সনদ দেওয়া দুটি সংস্থাই বাইরের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন যাচাই করে হালাল সনদ দিত। তবে গত ১৪ জুলাই বিএসটিআই হালাল পণ্যের সনদ দিতে নিজস্ব ল্যাব উদ্বোধন করেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের হালাল পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সনদ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে হালাল পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশে রপ্তানি সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা দিতে হবে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হালাল পণ্য উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে নীতিগত সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যেও দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে।