
নোয়াখালী জেলার ছয়টি আসনেই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নোয়াখালীজুড়ে জয় পেয়ে আবারও ‘দুর্গ’ ফিরে পেতে চাইছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সব আসনে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পাঁচটি আসনে এরই মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নিবন্ধন না পেলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৬ আসনে একজন প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।
ছয়টি আসনের সর্বত্র নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ, আলোচনাসভা, সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাঁদের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভোটাররা বলছেন, জেলাজুড়ে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া।
স্থানীয়রা বলছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী মূলত বিএনপির ঘাঁটি। জেলার ছয়টি আসনে দলীয় ভিত্তি শক্ত থাকলেও গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এখানে এই দলের নেতাকর্মীদের বড় অংশই দমন-পীড়নের শিকার হন।
জামায়াতে ইসলামী আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ত্রয়োদশ নির্বাচনে নোয়াখালীর ছয়টি আসনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেছে।
জেলার ৯টি উপজেলা ও আটটি পৌরসভা নিয়ে ছয়টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালী-১, নোয়াখালী-২, নোয়াখালী-৪ ও নোয়াখালী-৫ আসনের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে আসন বিন্যাস আগের মতো রাখার জন্য আন্দোলন করছে স্থানীয়রা।
নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি উপজেলা আংশিক) : ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন।
এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য। দল থেকে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে তিনি এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ-গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সামসুল আলম সাদিক ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থী সোনাইমুড়ী উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল আজিজ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম কাউসার।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী উপজেলা আংশিক) : এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছিলেন। এ আসন থেকে তিনি এবারও মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁর অনুসারীরা আশাবাদী। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সেনবাগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমান ও সৌদি আরব দক্ষিণাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আহমদ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী জেলা মজলিসে শুরা সদস্য ও সেনবাগ উপজেলা সভাপতি মাওলানা ফয়েজ উল্যাহ হাবিবী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ খলিলুর রহমান।
নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ : এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকতউল্লা বুলু। ২০০১ সালের নির্বাচনে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম বিএনপি থেকে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এ আসন থেকে এবারও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় তিনি আছেন। এলাকায় নিয়মিত সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। বিএনপি থেকে অন্যজন মনোনয়ন চাইছেন পারটেক্স গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি প্রয়াত এম এ হাশেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
এ আসনে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মো. বোরহান উদ্দিন।
এখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের উত্তর জেলা সহসভাপতি মুফতি শহিদুল ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোরশেদ আলম মাসুম। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য মাওলানা নূর উদ্দিন।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) : ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা মো. শাহজাহান। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে আবার জেলার রাজনীতিতে সরব হয়েছেন। এ আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে তাঁর অনুসারীরা আশা করছেন। এ আসনে বিএনপির মিডিয়া সেল ও দলের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য এবং দেশমাতা ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার আবু সালেহ মো. সায়েমও মনোনয়ন চাইতে পারেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।
এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির ইসহাক খন্দকার। এই আসন থেকে গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য মো. আবদুজ জাহের এখানে প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
এ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের জেলা শাখার সহসভাপতি শায়খুল হাদিস মুফতি আবুল কাশেম আমিনি ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা রুহুল আমিন চৌধুরী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের নোয়াখালী জেলা দক্ষিণের সহসভাপতি মো. ফিরোজ আলম।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা) : এই আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য, প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বেশ কযেকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসনে তাঁর সহধর্মিণী সাবেক এমপি হাসনা জসিম উদ্দিন মওদুদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলীয় সমর্থকদের নিয়ে তিনি জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহপল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ব্যবসায়ী ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আসনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি মাওলানা আতিক উল্যাহ। এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের নোয়াখালী জেলা শুরার সদস্য ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা আলী আহম্মদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের কবিরহাট উপজেলা সভাপতি মাওলানা আবু নাসের।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) : দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় উপজেলা নিয়ে এই আসনে বিগত সময়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে এবং ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র হিসেবে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন তাঁর অনুসারীরা। তিনি অসুস্থ থাকলে তাঁর ছেলে প্রকৌশলী ফারহান মোহাম্মদ আজিম বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ ছাড়া এখানে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান চাকসুর সাবেক এজিএস, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ। এখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ তৎপর রয়েছেন। এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঢাকা মহানগর জামায়াতের শুরা সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও হাতিয়া উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মো. মাহফুজুল হক। এখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হাতিয়া উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজমির হোসেন।