Image description

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের প্রশ্নে বাংলাদেশ কোন পথে হাঁটছে, পেছনে হাঁটছে কি না—এমন প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘চাপ সৃষ্টি করতে বলা হচ্ছে আমাদের (নারীদের), তাহলে কাদের চাপে পড়ে, কোন দিকে হাঁটছে এই সরকার? নারীর ক্ষমতায়নের জায়গাটা কোন দিকে যাবে, সেটা নিশ্চয়ই বিবেচনা করতে হবে ঐকমত্য কমিশনকে।’

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে রাশেদা কে চৌধূরী এ কথাগুলো বলেন। এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।

একটা বিশেষ গোষ্ঠী বা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বা কারও কাছে অন্তর্বর্তী সরকার যে ‘বায়াসড’ (পক্ষপাতদুষ্ট) নয়, সেটা তাদেরই (সরকার) প্রমাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি আরও বলেন, ‘কারণ মানুষ যদি এ রকম ধরে নিয়ে বসে থাকে তাহলে তো অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করা মুশকিল হবে।'

ঐকমত্য কমিশনের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, 'মনে হচ্ছে আমরা যেন বাংলাদেশে নাই।' এ সময় তিনি নারীর ডাকে আরেকটি মৈত্রী যাত্রা করারও প্রত্যাশা জানান।

দেশে নারীদের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত কেন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে—এমন প্রশ্ন রাখেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে আছি। মাঠে কাজ করছি। আমরা জানি, এই মাঠে কাজ করছি। তো আমরা জানি যে পলিটিক্যাল পার্টিগুলা কাদের হয়ে কাজ, কী জন্য কাজ করে, কোন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে—সেই জায়গায় আমাদের যেতে হবে। আমাদের তাদের (রাজনৈতিক দল) কাছে দাবি করতে হবে।'

নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশে 'একটা মিথ' হিসাবে আছে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, অংশগ্রহণ করলেই ক্ষমতায়ন হয়ে যায়, তো অংশীদারত্ব কোথায়।’

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, '৫০ শতাংশের (সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব) কথা এসেছে। আমরা ওটাই বলব। এটার ব্যাপারেও আমাকে দুই-একজন ফোন করেছিলেন। কেউ একজন বললেন ঠিক আছে কামান চান, হয়তোবা বন্দুক তুমি পাবে। এ রকম কথাও শুনতে হয়েছে।’

৫০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব না থাকলে নারীরা আরও পিছিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে আমরা কেন দেনদরবার করব? করলে সেটা এ মুহূর্তে নয়, সেটা করব সংসদ হয়ে যাওয়ার পরে।’

‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে 'জাতীয় সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।  এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো
‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে 'জাতীয় সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলোছবি: প্রথম আলো

সব রাজনৈতিক দলকে মানানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে ঐকমত্য কমিশনের কাছে দাবি জানান রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় কাজ করি। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে। আপনারা ডাকলে আমরা আসব। আমরা দাবি করেছি যে আপনারা অনতিবিলম্বে বসেন।'

নারীদের বিষয়ে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ না হওয়ার বিষয়ে হতাশা জানান সাবেক এই উপদেষ্টা। ঐকমত্য কমিশনের প্রতি তিনি বলেন, 'এখন ওনারা বাস্তবায়নের জায়গায় আমার সঙ্গে বসবেন। শুরু থেকে কেন উই আর নট পার্ট অব ডিসকাশন?'

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে অংশ নিয়েছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত।