
জাতীয় পার্টিতে ফের ভাঙনের সুর। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ছাড়াই ১০ম কাউন্সিলের আয়োজন করেছেন ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। শনিবার গুলশানের একটি পার্টি সেন্টারে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধ-বহিষ্কার হওয়া নেতারা একাট্টা হয়ে আয়োজন করছেন এই কাউন্সিলের। এদিকে জিএম কাদের ঘোষিত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, এটি বহিষ্কৃতদের কাউন্সিল। এতে মূলধারার কোনো নেতাকর্মী যাবে না। এদিকে এই কাউন্সিলের প্রস্তুতিমূলক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেয়ায় ৩ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
শনিবার কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করবেন ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তার সঙ্গে জোরলয়ে হাল ধরেছেন কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ অন্য নেতারা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
শুক্রবার কাউন্সিল উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা। দেন ঐক্যের ডাক। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এই সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এর মধ্যদিয়ে পার্টির মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ তা দূর হবে। বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে, সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন- এই পার্টি আলাদা হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, শনিবারের সম্মেলন হবে পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল। যার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নম্বর ১২। আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ নেয়া হয়। এই ধারার ক্ষমতাবলে, ৫ই আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে প্রেসিডিয়াম সভা আয়োজিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির কো- চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, এডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল খোকন, ইয়াকুব হোসেন প্রমুখ।
ওদিকে কাউন্সিলে ওতপ্রোতভাবে যোগ দেয়ায় তিন নেতাকে অব্যাহিত দিয়েছে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকলপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনূর রশিদ দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে এই কাউন্সিলের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন জিএম কাদের ঘোষিত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মলেন তিনি বলেন, চেয়ারম্যান দায়িত্ব না দিলে অন্য কোনো পন্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ জাতীয় পার্টিতে নেই। গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে চেয়ারম্যানের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান অথবা প্রেসিডিয়ামের কোনো সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান এখন দেশে আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত অফিসে আসেন, তাছাড়া কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেননি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের কাজ করার প্রক্রিয়াটি শুরু থেকে বেআইনি এবং অবৈধ।