Image description
রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা; অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, অভিমত বিশেষজ্ঞদের

গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বড় আকারে বাড়ানো হয়েছে। ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশেষ করে আয়কর খাতের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৪২ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা এনবিআরের ইতিহাসে অন্যতম উচ্চ হার। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে ৩০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং কাস্টমস ডিউটিতে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংগৃহীত হয়েছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে এনবিআরের তিনটি প্রধান ইউনিটকে আগের বছরের তুলনায় ২৯ থেকে ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। অথচ গত অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ দশমিক ২৩ শতাংশ, যা ইতিহাসে অন্যতম নিম্ন প্রবৃদ্ধি। গত অর্থবছরের জুন মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য থেকে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ ঘাটতি ছিল, যা বছর শেষে ১৯ শতাংশ হ্রাস পায়।

এ প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা করদাতাদের ওপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের উচ্চ লক্ষ্য বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কর আদায়ে গতিশীলতা নেই, ব্যবসায়িক পরিবেশ এখনো স্থিতিশীল হয়নি, উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, মুনাফা কমেছে এসব কারণে ব্যবসাগুলোর বাড়তি কর পরিশোধের সক্ষমতা কমে গেছে।’

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাধারণত অর্থবছরের শেষ মাসে কর আদায়ে গতি দেখা যায়, কিন্তু এবার তা হয়নি। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, এডিপি বাস্তবায়নে দুর্বলতা, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং ব্যবসার মন্দা এর জন্য দায়ী।’

অপরদিকে, এখনো পর্যন্ত এনবিআরের কাঙ্ক্ষিত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার আলোর মুখ দেখেনি। ২০২৫ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে করনীতি ও কর প্রশাসনের বিভাজনের জন্য যে অধ্যাদেশ পাস হওয়ার কথা ছিল, তাও পিছিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ড. ফাহমিদা বলেন, ‘এ সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়ায় করদাতাদের হয়রানি বেড়েছে। এখন আগের করদাতাদের থেকেই জোর করে লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে।’ এমন দুর্বল রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেট তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসতে পারে। উন্নয়ন বাজেটও রাখা হয়েছে গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।