
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় ৮ কোটি টাকার ব্রিজ প্রকল্প আজ এলাকায় পরিণত হয়েছে কৌতুক ও হতাশার প্রতীকে। বছর ঘুরে গেলেও আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় জনগণের ভরসা এখন বাঁশের তৈরি একটি পুরোনো সাঁকো। স্থানীয়রা ক্ষোভের সঙ্গে এর নাম দিয়েছেন—‘৮ কোটি টাকার বাঁশের সাঁকো’!
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলা বাজার-দনারাম সড়কে বেথরি নদীর উপর একটি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। বরাদ্দ ধরা হয় ৭ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার ২৪৯ টাকা। কাজটি পায় শেরপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মোশারফ (জেবি)। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত।
তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেই ঠিকাদার কার্যত উধাও। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে নির্মাণকাজ। অথচ ঠিকাদার বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উত্তোলন করে নিয়েছেন।

নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁশের তৈরি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো। শিশু শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারী—সবারই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
বাংলা বাজার এলাকার নাজিম আহমেদ ও তৈমুর আলি, আজিজপুর এলাকার শাহরিয়ার আহমদ খালেদ কালবেলাকে বলেন, অত্র ইউনিয়নের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি ৮ কোটি টাকার ব্রিজ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ করে মোটা অঙ্কের বিল তুলে নিয়ে ঠিকাদারের গা ঢাকা দেওয়া শুধু দায়িত্বহীনতা নয়, এটি জনগণের করের টাকায় প্রকাশ্য চুরি। স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ক্রিয়তা এখানেই প্রশ্নবিদ্ধ।
একদিকে মানুষ চরম দুর্ভোগে, অন্যদিকে চলছে দায়মুক্তির সংস্কৃতি। আমরা চাই—অবিলম্বে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হওয়ার সময়।
পশ্চিম পৈলনপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুজেফর আলী বলেন, ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেছেন। বারবার বলার পরও কাজ শুরু হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার ধ্রুব মোশারফ বলেন, দেশের পটপরিবর্তন ও বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি, সুযোগ পেলে আবার কাজ শুরু করব।
এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিয়েও কাজ শুরু করানো যায়নি। চুক্তি বাতিলের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।