Image description

রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি ঘুষ বাণিজ্য করেও রহস্যজনকভাবে শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কার পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র মানুষের মামলা না নেওয়া, মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা রেখে মাদক কারবারে সহায়তা করা, কারবারিদের কাছে মাসিক মাসোহারা উত্তোলন, ঘুষ বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও বারবার জেলা ও বিভাগের শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে একাধিক নিউজ প্রকাশ হলেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।

গত ১১ মে ‘গরীবের মামলায় গুরুত্ব নেই ওসির: বিত্তবানদের প্রভাব’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ওসি রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশিত হয়। এতে কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবারের রেফারেন্স দেওয়া হয়।

এছাড়াও বাংলার নবকণ্ঠ পত্রিকায় ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিন মাদক রাজ্যের শ্রেষ্ঠ ওসি, ঘুষ ও মাসোহারা আদায় করেন এস আই মাসুদসহ কয়েকজন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতো অভিযোগের পরেও ওসি রুহুল আমিন শ্রেষ্ঠ ওসি কীভাবে নির্বাচিত হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

এদিকে, সম্প্রতি আদালত কর্তৃক রিসিভার নিযুক্ত হয়ে পুকুর লিজে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ঘুষ লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে। জিয়ারুল ইসলাম নামের এক পুকুর ব্যবসায়ী ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকায় গোদাগাড়ীর দিগরাম মৌজায় ৪ একর পরিমান একটি পুকুরের লিজ গ্রহণ করেন। ঐ পুকুরের আরএস দাগ নং ৪২, এসএ দাগ নং ৭৫, জেএল নং ৪৬। ওসি রুহুল আমিন রিসিভার নিযুক্ত হয়ে গোপনে গত ১৬ এপ্রিল পুকুরটি জিয়ারুলকে লিজ দেন। বিনিময়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন (অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত)।

পুকুর ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ১০ বছর থেকে আমি পুকুরটি লিজ নিয়ে আসছি। আমি প্রতিবারই থানায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার করে টাকা দিই। আর লিজ বাবদ যা ধরা হয় সেটাও পরিশোধ করি। এর আগে তো এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আপনাদের এসব নিউজ করার দরকার নাই। আরও অন্যান্য বিষয় আছে সেগুলো নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে নিউজ করেন।’

পতিত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা নিয়েও ওসির বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেছে। শ্রীমন্ত পুর এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে জুবায়ের, নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার হন মে মাসের ১২ তারিখ। কারাবাসে ছিলেন প্রায় ২০ দিন।

কারাবাস শেষে জুবায়ের জানান, ‘তৎকালীন এমপি ফারুক চৌধুরী আমাকে গোদাগাড়ী পৌর ছাত্রলীগের কমিটির সহ-সভাপতি বানিয়েছিলেন। কিন্তু আমি কোনো দলীয় কার্যক্রমে ছিলাম না। তারপরও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আমার চাচাতো মামা পুলিশের এসআই সেলিম রেজা গোদাগাড়ীর ওসিকে প্রভাবিত করে আমাকে নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করায়। যদিও এজাহারে আমার নাম নেই। পরে ওসি রুহুল আমিন আমাকে আরও অন্যান্য যেসব মামলা আছে, সেগুলোতেও গ্রেফতার দেখানোর ভয় দেখায়। পরে আর কোনো মামলা না দিতে ২ লক্ষ টাকা দাবি করেন। আমি নিরুপায় হয়ে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিই।’

এভাবে একের পর এক ঘুষ বাণিজ্য করেও শ্রেষ্ঠ ওসির পুরষ্কার পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পোস্টের কমেন্ট বক্সেও নানা সমালোচনা হয় ওসির বিরুদ্ধে। এতো সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে পুরস্কারে ভূষিত হন এ নিয়ে প্রশ্ন সচেতন মহলে।

উল্লেখ্য, গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিন গোদাগাড়ীতে যোগদানের পর প্রায় ৫ বার তার কৃতকর্মের ফলে পুরস্কৃত হন। ১৭ এপ্রিল শ্রেষ্ঠ ওসি, ১ মে আইজিপি এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ অর্জন, ১৭ মে শ্রেষ্ঠ ওসি ও শেষ ১৭ জুলাই শ্রেষ্ঠ ওসির পুরষ্কার পান।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অসুস্থ, ছুটিতে আছি।’ বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সাথে (ডিএসবি) যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।