
সিরাজ দ্দৌলা। তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) গাড়িচালক; কিন্তু চলনে-বলনে আর সম্পত্তির মালিকানায় যেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। গাড়িচালক হয়েও গাড়ি চালান না তিনি। বিগত সরকারের আমলে বিমানবন্দরে ভিআইপি যাত্রীদের প্রটোকল দেওয়াই ছিল তার কাজ। কথিত আছে, এই প্রভাব খাটিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় চোরাচালানের একটা সিন্ডিকেটও পরিচালনা করেন তিনি। একবার স্বর্ণ চোরাচালান করতে গিয়ে ধরাও খান। তবে এতকিছুর পরও রয়েছেন বহালে।
বেবিচক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই তার অপকর্মের জন্য সিরাজ দ্দৌলাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছিল, তা তিনি ঠেকিয়ে দেন নিজের প্রভাবে, থেকে যান বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে। এরপর নামেমাত্র থাকেন সিভিল এভিয়েশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (সিভিল) গাড়িচালক হিসেবে, তবে গাড়ি চালাতেন না। আড়ালে পরিচালনা করতেন চোরাচালানের সিন্ডিকেট। অবশ্য গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি ভোল পাল্টে চরম আওয়ামীবিরোধী সাজেন। সম্প্রতি তাকে বেবিচকের এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে বদলি করে তার চাকরি সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সংযুক্ত করা হয়। গতকাল পর্যন্ত তিনি যোগ দেননি সেখানে। ঢাকায় থেকে যাওয়ার জন্য শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ।
অবশ্য সিরাজ দ্দৌলা কালবেলাকে বলেন, তিনি যাতে ঢাকায় থাকতে না পারেন, সেজন্য একটি চক্র তার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, তিনি সিভিল এভিয়েশনে জাতীয়তাবাদী ফোরামের সদস্য সচিব। সিভিল এভিয়েশনে থাকা আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার রয়েছেন। নানা বিষয়ে আন্দোলন করেছেন, এজন্য তাকে ষড়যন্ত্র করে ঢাকার বাইরে পাঠানোর পাঁয়তারা চলছে।
যদিও সিভিল এভিয়েশনের একাধিক সূত্র বলছে, সিরাজ দ্দৌলা গাড়িচালক হলেও তিনি প্রভাবশালী। আওয়ামী লীগের আমলে তার প্রভাবে কাছে বড় কর্মকর্তারাও ধরাশায়ী থাকতেন। ওই সময়ে তিনি বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের নাম ব্যবহার করে বিমানবন্দরে দৌরাত্ম্য দেখাতেন। তার স্ত্রীপক্ষের স্বজন এক আওয়ামী লীগ নেতার দাপট দেখাতেন। আওয়ামী পরিচয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ২০২৪ সালের মে মাসে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাকে ঢাকা থেকে বাইরের কোনো কর্মস্থলে বদলি করাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এরপর ওই বছরের ২২ আগস্ট তাকে ঢাকা থেকে বেবিচকের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরে বদলি করা হয়; কিন্তু তার পুরোনো প্রভাব খাটিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকেন বহালে।
সিরাজ দ্দৌলা কালবেলাকে বলেন, তিনি স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত নন। গত বছর বিদেশ থেকে আসা এক স্বজনকে রিসিভ করেন তিনি। তার কাছে কিছু স্বর্ণ ছিল, তবে তা কাস্টমস আইনের বেশি ছিল না।
তার দাবি, তিনি আওয়ামী লীগ করলে তো ওই সময়ে ঢাকার বাইরে থাকতে হতো না। বছর দেড়েক সিলেটে চাকরি করে ২০২৩ সালে ঢাকায় ফেরেন। এখন আবার বদলি করে দিয়েছে। আজকালের মধ্যেই নতুন কর্মস্থলে যাবেন।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে বেবিচকের গাড়িচালকের চাকরিতে যুক্ত হয়ে তিনি ঢাকাতেই ছিলেন। মাঝে সিলেট ও চট্টগ্রামে কয়েক বছর চাকরি করেন। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর ছিলেন ঢাকাতেই।
সূত্র বলছে, সিরাজ দুই স্ত্রী নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করেন। ঢাকার কাওলায় কিনেছেন জমি। গাড়ি চালানোর আড়ালে নিজ এলাকা চট্টগ্রামসহ নানা এলাকায় নামে-বেনামে করেছেন সম্পত্তি। তবে সিরাজ দ্দৌলা কালবেলার কাছে তা অস্বীকার করে বলেছেন, বেতনের বাইরে তার কোনো আয় নেই, সম্পত্তি নেই। যদিও কাওলার নামাপাড়া এলাকায় ১৬ জন মিলে কিছু জায়গা কিনেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।